পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/২৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২২৯ ষষ্ঠ অধ্যায : প্রাচীন দত্ত-বংশ বিবরণ 0 শ্ৰীহট্টের ইতিবৃত্ত দত্ত কানুনগো একদা এক বিচিত্র স্বপ্ন দর্শন করেন। কথিত আছে, তদনুসারে পরিদনি প্রভাতে ব্রাহ্মণ ও বহুব্যক্তি সহ স্বীয় পুষ্করিণীর ঘাটে গিয়া ব্রাহ্মণকে জলে নামাইলেন। ব্রাহ্মণ জলে অন্বেষণ করিতে করতে গৌরীপটি সহ উমামহেশ্বর শিবের এক পাষাণ মূৰ্ত্তি প্রাপ্ত হইলেন। তৎসহ গায়কের প্রাপ্ত হন। হৃদয়ানন্দ নিজ ভ্রাতা ষষ্ঠীবর দত্ত সহ পরামর্শ ক্রমে বহিবৰ্বাটিকায় এক গৃহ নিৰ্ম্মাণ কবিযা দেবতাকে সংস্থাপিত করেন। চৈত্র-সংক্রান্তি যোগে এই দেবতার সম্মুখে চরক পূজা হইত। হৃদয়ানন্দ অতি সুগায়ক ছিলেন, কথিত আছে যে তিনি যখন মেঘমল্লার রাগিনীতে সঙ্গীত আরম্ভ করিতেন, তখন মেঘাড়ম্বর হইত। এই হৃদয়ানন্দের ভনিতাযুক্ত পদ্মা-পুরাণের অনেকটি লাচাড়ী ও কবিতা পাওয়া যায়। কবি ষষ্ঠীবর সংবাদ ষষ্ঠীবর একজন উৎকৃষ্ঠ গায়ক ছিলেন; তৎকত্ত্বক এতদঞ্চলে “ডরাই” পূজার গানের নিযম প্রচলিত হয়। তিনি বিস্তারিত রূপে “পদ্মাপুরাণ” রচনা করিয়া অমর হইয়া রহিয়াছেন। তাহার রচিত “পদ্মাপুরাণ” কেবল শ্রীহট্টের ঘবে ঘবেই প্রচলিত নহে, পূৰ্ব্ববঙ্গের বহুস্থানে ষষ্ঠীবরে এই গ্রন্থ পাওয়া যায়। পূৰ্ব্ববঙ্গে পদ্মাপুরাণেব অনেক রচয়িতা আছেন, শ্রীহট্ট জেলাতেই দ্বাবিংশতাধিক পদ্মাপুরাণ বচয়িতার সংবাদ প্রাপ্ত হই, ইহাদেব মধ্যে ষষ্ঠীবর ও নারায়ণ দেবই অধিক ভাগ্যবান; রচনা, ভাব ও লালিতে ইহাদেব পদ্মাপুবাণই সৰ্ব্বাদৃত। ষষ্ঠীবর নিজ কৃতিত্ব জ্ঞান ছিলেন, তাহার গ্রন্থের মধ্যে এই ভনিতা পাওয়া যায় ঃ “কহে ষষ্ঠীবর কবি কণ্ঠে ভারতী দেবী জয়দেবী মনসার চরণ।” কথিত আছে স্বগীয় বিষহবিব বরে ষষ্টীবরের বংশীয় কাহাকেই সপ দংশন করে না; এই বংশীয কোন ব্যক্তিও সপ বধ করেন না। ডরাই গানের স্রষ্টা কবি ষষ্টীবর তালচর হাতে লইয়া পদ্মাপুরাণ গান করিতেন। ভক্তকবির মুখে সে গান বড়ই সুন্দর শুনাইত। প্রতিবেশী জনৈক ব্রাহ্মণ দ্বারা হৃদযানন্দ ও ষষ্টীবর পূজা করাইতেন, এই ব্রাহ্মণ সেই তালচব ও ধ্যান প্রাপ্ত হন এবং তাহার নিকট হইতে পদ্মাপুরাণ গান শিক্ষা করেন। এই ব্রাহ্মণের বংশধর লংলা পরগণায় রায়ের গাও গমন করিয়া স্বগীয় বিষহরি স্থাপন কবেন। তদ্বংশীয়গণ অদ্যাপি তথায় আছেন এবং বিষহরিব গান করিয়া থাকেন। সেই প্রাচীন তালচব অদ্যাপি র্তাহাদে গৃহে আছে বলিয়া শুনা যায়। হৃদয়ানন্দ দত্ত কানুনগোহের পুত্র চতুষ্ঠয়ের মধ্যে প্রথম পুত্র শতানন্দ কানুনগো পিতৃ প্রতিষ্ঠিত উমামহেশ্বরের একত্রে বাস করা অসঙ্গত বিবেচনা করিয়া, অপরাপর ভ্রাতৃগণকে গয়ঘড়ে পৃথক বাড়ী করিয়া দেন। তিনি সেই বাড়ী ও তৎচতুষ্পাশ্বের ভূমি উমা মহেশ্বরেব পূজক বামজীবন ঠাকুরকে অপণ পূৰ্ব্বক মহাসহস্র গ্রামে গিয়া বাস করেন।