পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৪৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ ভাগ 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৭০ উপদেশ দিলেন ও পিতার বাধ্য হইয়া চলিতে অনুরোধ করিলেন। কিন্তু তহরা তদীয় বাক্য গ্রহণ করিল না। তখন ধৈএী ক্রোধে কম্পিত হইতে লাগিলেন এবং পিতা অবাধ্য সেই গৰ্ব্বিত পুত্রগণকে সমাজে হীন করিয়া দিলেন। মধুর পুত্ৰগণ তদবধি “কাপ” নামে খ্যাত হইলেন। এইরূপে কন্যার বিবাহাদি সম্পন্ন করিয়া নরসিংহ সমাজে সম্মানিত হইলেন এবং মন্ত্রিত্বপদ গ্রহণে দিনাজপুরে গমন করিলেন। র্তাহার মন্ত্রণাবলে দিনাজপুরের রাজার রাজ্য শ্রী বিবৰ্দ্ধিত হইয়া উঠিয়াছিল। ঐ সময়ে বঙ্গদেশে যোগ্যতার শাসনকৰ্ত্তা কেহ ছিল না, সেই সুযোগে রাজা গণেশের মনে উচ্চাভিলাষ উপজাত হয়, মন্ত্রীর সহিত সেই বিষয়ে পরামর্শ ক্রমে তিনি খৃষ্টীয় চতুর্দশ শতাব্দীতে গেয়াসউদ্দীন বাদশাহের পৌত্র দ্বিতীয় শামস উদ্দীনকে নিহত করিয়া গৌড় অধিকার করেন। বহুদেশ বহুকাল পরে বিদ্যুৎ ঝলকের ন্যায় হিন্দুর গৌরবচ্ছটায় অল্পমাত্র প্রভাসিত হয়। কুলীন শ্রেষ্ঠ মধুমৈত্রকে কন্যাদান নরসিংহের একটি কীৰ্ত্তি। নরসিংহের পত্নী কমলাবতী রত্নগৰ্ভ ছিলেন; তাহার গর্ভে লাউড়ের রাজমন্ত্রী বৃহস্পতিবুদ্ধি কুবেরাচার্যের জন্ম হয়। ইহার কথা যথাস্থানে উক্ত হইয়াছে। পূৰ্ব্বে সমগ্র জোয়ানশাহী পরগণা শ্রীহট্টের অন্তর্গত ছিল, এখন ইহার অধিকাংশ ময়মনসিংহ ভুক্ত হইয়াছে। এই জোয়ানশাহীর অন্তর্গত অষ্টগ্রামে কিশোর সেন জন্মগ্রহণ করেন। নবকিশোব অশৈশবে শ্রীহট্টবাসী। শৈশবে তরফ—পৈল নিবাসী ভগিনীপতি রাজমোহন মোনশী মহাশয়ের অদূরে থাকিয লেখাপড়া শিক্ষা করেন; পরে শ্রীহট্টের শহরে গিয়া ইরেজী ভাষায় কৃতবিদ্য হইয়া প্রথমতঃ মিশনাবী স্কুলে কাজ করিয়া স্বীয় দক্ষতা ও সৌজন্যে স্মরণীয় হইয়াছিলেন। পরে তিনি শ্রীহট্টে কাছাড়েব ডিপুটী ইনস্পেক্টর অব স্কুল নিযুক্ত হন। এই কাজে তিনি ত্রিশ বৎসরের অধিক কাল প্রতিষ্ঠ থাকিয়া কেবল শিক্ষা বিষয়ে নহে—সৰ্ব্ববিধ সৎকার্য্যে সহায়তা করেন। তিনি কয়েক মাস কাল আসামের স্কুল ইনস্পেক্টরের পদেও সমাসীন হইয়া দক্ষতা প্রদর্শন করিয়াছিলেন। ১৮৯৬সালের ৩১শে ডিসেম্বর সুরমা উপত্যকার স্কুল ডিপুটী ইনস্পেক্টরের চাৰ্জ্জ শ্রীযুক্ত পদ্মনাথ ভট্টাচাৰ্য বিদ্যাবিনোদ মহোদয়কে সমজাইয়া দিয়া অবসর গ্রহণ করেন। ১৮৬৭ সালে হীরক জুবিলী উপলক্ষে তিনি “রায়সাহেব” উপাধি প্রাপ্ত হন। তিনি তরফ সুঘরের মজুমদার বংশে বিবাহ করিয়া তৎসন্নিকটস্থ জাজিউতা গ্রামে বাড়ী করিয়া নিজেকে শ্রীহট্টের অধিবাসী বলিয়া খ্যাপন করিয়াছিলেন। দুঃখের বিষয় এক মাত্র পুত্র সন্তানটি অকালে মৃত হওয়ায় ঐ বাস বাটিকা স্থায়ী হইতে পারিল না। র্তাহাব স্মৃতিরক্ষার্থ কৃতজ্ঞ শ্রীহট্ট ও কাছাড়বাসী নানা অনুষ্ঠান করিয়াছেন—তন্মধ্যে কৃষিশিক্ষার্থ “নবকিশোর বৃত্তি” (শ্রীহট্ট ছাত্র ভাণ্ডার হইতে প্রদত্ত) উল্লেখযোগ্য। ১৯১০ সালে ৪২ বৎসর বয়সে তিনি স্বৰ্গীরূঢ় হন। ৬৯. বাল্য লীলাসুত্র-গ্রন্থে গণেশ কর্তৃক নোলমান বিজয়ের তাবিখ এইরূপ লিখিতঃ– “গ্রহ পক্ষাক্ষিশশ ধৃতিমিতে শাকে সুবুদ্ধিমান। ঘণেশো যবনং জিত্বা গৌড়েকচ্ছত্রধ গভুৎ।”