পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৫০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৮১ জীবন বৃত্তান্ত 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত প্রসন্নকুমার ভট্টাচাৰ্য্য বুরুঙ্গার গৌতম গৌত্রীয় প্রসন্নকুমার ভট্টাচার্য্যের কথা তত্ৰত শ্রীযুক্ত শরচ্চন্দ্র চৌধুরী মহাশয়ের প্রেরিত বিবরণ হইতে গৃহীত। তাহাতে লিখিত হইয়াছে যে, প্রসন্নকুমার কলিকাতার রাজেন্দ্রনারায়ণ কবিরত্বের নিকট আয়ুৰ্ব্বেদ শিক্ষা করিয়া দেশে আগমন করেন। দেশে আসিয়াই তিনি একটি কঠিন কাৰ্য্যে হস্তক্ষেপ করেন। তদঞ্চলে তখন তস্করের এত দৌরাত্ম্য ছিল যে, তজ্জন্য তত্ৰত অধিবাসীকে সৰ্ব্বদা অস্থির থাকিতে হইত; সিন্দুকের টাকা, ভাণ্ডারের ধন, গোশালার গরু, ঘটের নৌকা, পুকুরের মাছ, কিছুই নিরাপদ ছিল না। প্রতি রাত্রেই চুরি হইত, প্রতিবাড়ীতে প্রতি রাত্রে চোরের গতিবিধি ছিল। এরূপ বিপদ হইতে গ্রামবাসিগণকে রক্ষা করিতে যাহারা সাহস করিয়া কাৰ্য্যক্ষেত্রে অবতীর্ণ হয়, তাহারা ধন্যবাদভাজন এবং তাহাদের ঈদৃশ কার্য অনুকরণীয়। যাহারা চোর বা দুষ্ট দমনে সচেষ্ট হন, তাহাদের যথেষ্ট অর্থবল বা জনবল থাকা আবশ্যক, কিন্তু প্রসন্ন কুমার ধনী বা বড় সহায় সম্বল সম্পন্ন ছিলেন না কিন্তু মানসিক বল র্তাহার যথেষ্ট ছিল, তিনি একাই তিনি এই বিপজ্জনক কার্যে সাহসের সহিত অগ্রসর হইলেন। কার্যটি সাধারণের হিতজনক হইলেও তিনি কাহারও সহানুভূতি সম্যক প্রাপ্ত হইলেন না। চোরদের ভয়ে প্রকাশ্যে কেহই তাহার সহিত যোগ দিতে চাহিল না, আত্মীয় স্বজন বরং ভয় দেখাইয়া তাহাকে নিরুৎসাহ ও নিরস্ত করিতে ক্রটি করিলেন না; ইহাতে প্রাণহানির সম্ভাবনা বলিয়াও কেহ কেহ মত প্রকাশ করিলেন। প্রসন্নকুমার সকলই শুনিলেন কিন্তু গ্রামবাসিগণের রাত্রিকালের অশান্তি ও আতঙ্কের কথা মনে করিয়া, তিনি স্থির রহিতে পারিলেন না, তিনি তস্কর-দলনে বদ্ধপরিকর হইলেন। তাহার অতুল উৎসাহ দর্শনে আরও কয়েকটি লোক যোগ দিল এবং ক্রমেই দলবৃদ্ধি হইতে লাগিল। তখন চোরদের একটি তালিকা প্রস্তুত হইল ও প্রমাণ সংগৃহীত হইল। তাহার পর তিনি এই সংবাদ গবর্ণমেন্টের গোচর করিলেন, স্বয়ং ম্যাজিস্ট্রেট তথায় গিয়া উপস্থিত হইলেন। প্রসন্নকুমারের উদ্যোগে এক প্রকাণ্ড সভায় সন্নিকটবৰ্ত্তী পরগণাগুলি হইতে প্রায় সহস্র ব্যক্তি সমবেত হইল। কিন্তু সকলই নিস্তব্ধ, চোরদের বিরুদ্ধে প্রথমে কেহই সাক্ষ্য দিতে সাহস করিল না; সকলকে নিরুত্তর দেখিয়া প্রসন্ন কুমার অগ্রসর হইলেন, সভামধ্যে দাড়াইয়া সাহেবকে সৰ্ব্বাগ্রে বদমাশদিগকে দেখাইয়া দিলেন ও তাহাদের দুষ্কীৰ্ত্তি, পল্লীর দুরবস্থা অধিবাসিবর্গের ত্রাসের কথা নিপুণতার সহিত বুঝাইয়া দিলেন, সঙেগ সঙ্গে কিছু কিছু প্রমাণের উল্লেখও করিলেন। তাহার এই সৎসাহসের পরিচয় পাইয়া সভাস্থ ব্যক্তিবর্গের সাহস ও উৎসাহ উদ্দীপ্ত হইল এবং সকলেই তাহার দৃষ্টান্ত অনুসরণ করিল, তখন ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশ মতে পুলিশ তৎক্ষণাৎ চোরদিগকে বন্ধন করিয়া ফেলিল; বলা বাহুল্য যে চোরদের উপযুক্ত শাস্তি হইল; এই একটি নিঃসহায় যুবকের চেষ্টায় দেশে দীর্ঘকালের জন্য শান্তি বিরাজিত হইল। সকল দেশেই স্থানে স্থানে চোরের উপদ্রব আছে, কিন্তু দুষ্ট দমনে প্রসন্নকুমারের ন্যায় সৎসাহস প্রদর্শন অল্প লোকেই করিয়া থাকে, প্রসন্নকুমারের উদাহরণ এসব স্থলে সবৰ্বদা অনুকরণীয়। প্রাণকৃষ্ণ চক্ৰবৰ্ত্তী বিগত অদ্ধ শতাব্দী পূবেৰ্ব শ্রীহট্ট জেলায় যাহারা ব্যয়বহুল শাস্ত্র বিবিহত বৃহৎ ব্যাপার সম্পাদনপূৰ্ব্বক