পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৫৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ ভাগ 0 শ্ৰীহট্টের ইতিবৃত্ত ১২০ রাখাল শাহ রাখাল শাহ জাতিতে ধোপা ছিলেন, পূৰ্ব্বে তাহার অন্য কোন নাম ছিল কিনা জানা যায় না। তিনি সাধারণের কাছে পীর বা সিদ্ধপুরুষ বলিয়া গণ্য হইতেন। সম্ভবতঃ মোসলমানগণই তাহাকে “শাহ” নাম দিয়া থাকিবে। সুরমা নদীর তীরে কানাইঘাট স্থানে তিনি অবস্থিতি করিতেন। তাঁহার কাছে সৰ্ব্বদাই লোক যাইত এবং আপনাপন ইষ্টানিষ্ট জানিয়া আসিত, সন্নিকটবতী স্থানীয় লোকেরাই র্তাহাকে আহার আনিয়া দিত। সকলের জিনিস তিনি বাখিতেন না; ভবিষ্যতে যাহার মঙ্গল হইবে, সামান্য হইলেও তাহার দ্রব্যেই গ্রহণ করিতেন, অন্যথায় বহুমূল্য বস্তুও ছুইতেন না। এই ইঙ্গিতেই সাধারণতঃ লোকে নিজের ইষ্টানিষ্ট বুঝিয়া লইত ও তাহার প্রত্যক্ষ প্রমাণ পাইত। একদা নরসিংহপুরের কয়েক ব্যক্তি র্তাহার কাছে গিয়াছিল, আরও লোক তথায় ছিল; ইহারা গেলে তিনি উঠিয়া গিয়া তন্মধ্যে এক ব্যক্তিকে “বেদম” প্রহার করিয়া সে ব্যক্তি দুইনল আন্দাজ দূরে গিয়া বসিয়া রহিলে, বলিলেন “বেটা রক্ষা পাইলে।” ইহার কিছুক্ষণ পরে সকলে চলিয়া গেলে, নরসিংহপুরের লোকেরাও যাইতে ইচ্ছা করিল, কিন্তু তিনি যাইতে দিলেন না, সমস্ত রাত্রি তাহাদের কাছে শনির পাঁচালির কথা কহিয়া কাটাইলেন। পরদিন তাহারা বাড়ীতে গিয়া ভাবিল যে তাহাদের মধ্যে কাহারও গ্রহদোষ থাকিতে পারে। এইরূপ তখন কোষ্ঠী বিচারে দেখা গেল যে প্রহৃত ব্যক্তির রাশিতে শনির দৃষ্টি আছে। ইহার কিছুদিন পরে, কাৰ্য্যবশতঃ সেই ব্যক্তি মাঠে গেলে, হঠাৎ ঝড়বৃষ্টি আরম্ভ হয, বিদ্যুৎ চমকিতে থাকে। একবার তীব্রতেজে বিদ্যুৎ ছুটিল, সে ব্যক্তি ভয়ে দৌড়িয়া দুইনল আন্দাজ যাইতে না যাইতেই সেই স্থান বজ্রাঘাতে দুইটি মহিষ মৃত্যুমুখে পতিত হইল। এতদৃষ্টে সে ব্যক্তি বুঝিতে পারিল যে কেন সাধু লোকের প্রদত্ত দ্রব্য প্রায়শঃ তিনি বিলাইয়া দিতেন। একদা কয়েকটি দসু্য তাহাকে “মারধর" করিয়া কতক দ্রব্য লইয়া যায়। জনৈক পোলিশ কৰ্ম্মচারী কোনও প্রকারে ইহা জানিতে পারিয়া, তাহাকে সেই সকল লোকের নাম বলিয়া দিতে অনুরোধ করে। তিনি হাসিয়া উত্তর দেন “তুমিই” মারিয়া ধন নিয়াছ। পোলিশ কর্মচারী প্রকৃত তথ্য না পাইয়া ফিরিয়া যাইতে বাধ্য হন। জনৈক আত্মীয়ের মুখে শুনিয়াছিলাম, একদা তিনি কোন কার্যোপলক্ষে শ্রীহট্ট শহরে যাওয়া কালে, নৌকা হইতে ইহাকে দেখিতে গিয়াছিলেন। তাহার হাতে একটা রূপার বাধা হুক্কায় তামাক সাজা ছিল এবং খাইতে খাইতে গিয়াছিলেন। রাখাল শাহ হুক্কাটি চাহিয়া লন। শ্রীহট্টে গেলে তাহাব কাৰ্য্যটি অল্পায়াসে সুসিদ্ধ হওয়ায়, তিনি প্রত্যাগমন কালেও সাধুকে দেখিতে যান। হুঙ্কাটি দেখিতে না পাইয়া এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসায় জানিলেন যে চাহিদা নেওয়ার কিছুক্ষণ পরেই সাধু তাহা অপর যুক্তিকে দিছিল। আমী নীকায় ফিরিবার কালে প্রবল বেড়ে ঝড়বৃষ্টি আরম্ভ হয় তখন তিন যায়, বলিয়া দেন। মধ্যরাত্রে গুরুর গাত্রে অতিমাত্র জ্বালা উপস্থিত হয, প্রাণ যাইবার উপক্রম হয় কিন্তু গুরুর শত অনুরোধেও সতীর্থ স্বামীকে সে সংবাদ দিলেন না। এদিকে শুরু ছটফট করিতে করিতে নিজজীবের ন্যায় পড়িযা রহিলেন। প্রভাতে দ্বার উন্মুক্ত হইল, গুরুদেব উথিত হইলেন। তাহার বিশ্বাস যে স্বামীর সাধন প্রভাবে তিনি মৃত্যুমুখ রক্ষা পান। ৭/৮ বৎসর হইল, সে সতীর্থের মৃত্যু হইয়াছে।