পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৫৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৩৫ জীবন বৃত্তান্ত 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত সন্নিকটবৰ্ত্তী বিথঙ্গল নামক জঙ্গলে তখন হরাই ও সুরাই’ নামে দুই ভীষণ দসু্য বাস করিত। বৃড়ির টাকার গল্প শুনিয়া তাহাবা লোভ সম্বরণ করিতে পারিল না। একরাত্রে বুড়ির বাড়ীতে বড় আশায় আসিয়া উপস্থিত হইল। কিন্তু দসু্যদ্বয়ের দসু্যজীবনের অন্ত হইবার সময় আসিয়াছিল, তাই রামকৃষ্ণকে দেখিয়া তাহাদের চিত্ত পরিবৰ্ত্তিত হইয়া গেল, তাহারা সঙ্কল্পিত ইত্যাদি পাপে সংক্ষিপ্ত না হইয়া, সাধুর চরণে পতিত হইল ও অনুতাপ করিতে লাগিল। দসু্যদ্বয়কে রামকৃষ্ণ আশ্বাস দিলেন, তাহারা তদীয় কৃপাপ্রাপ্তে ভক্তরূপে পরিণত হইল। দসু্যদ্বয় রামকৃষ্ণকে বিথঙ্গলের জঙ্গলে লইয়া যাইতে চাহিল। রামকৃষ্ণ ইতিপূৰ্ব্বে বহুতর কৈবৰ্ত্তকে ভেখ দিয়াছিলেন, তাহাদিগকে লইয়া জলপথে বিথঙ্গল গমন করেন।* \ মহাত্মা রামকৃষ্ণ গোসাঞি কত্ত্বক বিথঙ্গলের প্রসিদ্ধ আখড়া স্থাপিত হয়; এতাদৃশ বৃহৎ আখড়া পূৰ্ব্বাঞ্চলে দ্বিতীয় নাই। রামকৃষ্ণ তীর্থভ্রমণকালে এই বিথঙ্গলের জঙ্গলের ধারে একদা উপবেশন কুরিয়াছিলেন ও গুরুস্মরণে একটি সঙ্গীত রচনা করিয়া গান করিয়াছিলেন। বিথঙ্গলের শ্যামল-বনসুষমা, বিশালবক্ষঃ প্রবাহিনীর নীলিমার সহিত মিলিয়া এক শান্ত সৌন্দর্যের উৎস খুলিয়া দিয়াছিল, তদর্শনে এই স্থানেই সাধনাশ্রম প্রতিষ্ঠিত করিতে তৎকালে তাহার বাসনা জাত হইয়াছিল। ভক্তের বাসনা কদাপি অপূর্ণ রহে না, বাঞ্ছাকল্পতরু হরিই পূরণ করিয়া থাকেন; তাই এথাকার দসু্যদ্বয় দস্তৃত্তি ত্যাগ করিয়া শিষ্য হইয়া গেল ও তাঁহাকে এথায় আনয়ন করিল। বিথঙ্গলে থাকিয়া রামকৃষ্ণ জগম্মোহনী-মত বিশেষ উদ্যম সহকারে প্রচার করিতে লাগিলেন।” তাহাতে র্তাহার নামে কেহ কেহ এই সম্প্রদায়ের নামও করিয়া থাকেন। বস্তুতঃ জগন্মোহন গোসাঞিই সম্প্রদায়ের প্রবক্তক, ইহা জগন্মোহনের জীবন চরিতেই বলা হইয়াছে। বৈষ্ণবসমাজে প্রাচীন শ্রীসম্প্রদায় যেমন পরবর্তী রামানুজ স্বামীর নামে চলিতেছে, পরবত্তী মধবাচার্য্যের নামে যেমন প্রাচীন ব্রহ্মসম্প্রদায় সংজ্ঞিত হয়, রুদ্র সম্প্রদায় যেমন পরবত্তী বল্লভাচার্যের নামে পরিচিত এবং সনক সম্প্রদায় নিস্বাদিত্যের নামেই আখ্যাত, তদ্রুপ জগন্মোহনী সম্প্রদায়ও জগন্মোহনের পরপর শিষ্য (তাহার চতুর্থ স্থানীয) রামকৃষ্ণের নামেও কখন কখনও আখ্যাত হইয়া থাকে।” রামকৃষ্ণ গোসাঞি সম্বন্ধে নানা জনশ্রুতি আছে। একটি মোসলমান ফকির তাহকে চাতুৰ্য্যজালে আবদ্ধ করিয়া শিষ্য করিয়াছিল বলিয়া যে জনশ্রুতি আছে তাহা যে একেবারে মিথ্যা, তাহা সহজেই ১৩৮ ইহাদের প্রকৃতনাম হবিবংশ ও সুবানন্দ। হবিবংশ সাহাকুলোদ্ভব এবং সুবানন্দ দাস জাতীয়ছিলেন।ইহাদের উভয়ের ংশ আছে এবং বংশধরবর্গের অবস্থাও হীন নহে বলিয়া জানা যায। ১৩৯. বিথঙ্গলে এক ব্যক্তির নিকট একটি “শ্রীঅঙ্গরী”দিয়া রামকৃষ্ণ বলেন যে, “ইহাতে আমার শ্রী রাখিয়া গেলাম।”তৎপর অঙ্গুরীযকটি তাহার বাড়ীতে নিয়া প্রোথিত হইয়াছিল বলিয়া ঐ স্থানই শেষে “শ্রীমঙ্গল” নামে খ্যতা হয়। (এ শ্রীমঙ্গল বিথঙ্গলেরই নামান্তর) ১৪১ ভারতবর্ষীয উপাসক সম্প্রদায় গ্রন্থের ১ম ভাগে অক্ষয়কুমার দত্ত মহাশয় লিখিয়াছেন—“রামকৃষ্ণ গোসাই নামে এক ব্যক্তি এই সম্প্রদায় প্রবৰ্ত্তিত কবেন।” তিনি একটু পরে ইহাও লিখিয়াছেন—“রামকৃষ্ণেব সময়েই এই মত সমধিক প্রচারিত হয়।” ঐতিহাসিক হান্টার সাহেব লিখিয়াছেন—A new religious sect has spring up among the Kailbartas founded by a certain Ramkrishna Gosain a member the that Sect &c. &c-Imperial Gazettcer of lndia. 2nd, Ed. p 149. এই উভয় গ্রন্থকারেরই কোন কোন বিষয়ে ভ্রম হইয়াছে বলা হইয়াছে, তাহা বলা বাহুল্য।