পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৬৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২১৭ পরিশিষ্ট 0 শ্ৰীহট্টের ইতিবৃত্ত শ্রীহট্টও সেই প্রজুলৎ প্রভায় প্রকাশিত হইয়াছিল।” ইহা খৃষ্টীয় সপ্তম শতাব্দী পৰ্য্যন্ত কামরূপের অন্তর্ভুক্ত ছিল। শ্রীহট্ট ভূমি বৈষ্ণব প্রসূতি। ইহা চৈতন্য মহাপ্রভুর পিতৃ ও মাতৃভূমি। খৃষ্টীয় পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষভাগে “ভারতগৌরব রঘুনাথ শ্রীহট্টের পঞ্চখণ্ডে জন্মগ্রহণ করেন।” সুতরাং এতদিন পরে এই প্রসিদ্ধ স্থানের ইতিহাস প্রকাশিত হওয়ায় একটী অভাব দূরীভূত হইল। শ্রীহট্টের ইতিহাস দুইখণ্ডে সমাপ্ত হইবে। আলোচ্য গ্রন্থ পূৰ্ব্বাংশ। এই গ্রন্থ সহস্ৰাধিক পৃষ্ঠায় সম্পূর্ণ। আজ নয় বৎসরের ফলে, ইহা মুদ্রাযন্ত্রের লৌহ কারাগার ভেদ করিয়া জনসমাজে প্রচারিত হইল। ইহার প্রথমেই শ্রীযুক্ত পদ্মনাথ সৰ্ম্মণঃ লিখিত ভূমিকা, পুস্তকের গৌরব বৃদ্ধি করিয়াছে”। ইত্যাদি। প্রবাসী—আশ্বিন সংখ্যা ১৩১৮ সাল (সমালোচক প্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক অধ্যাপক শ্রীযুক্ত যদুনাথ সরকার এম এ) “শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত, পূৰ্ব্বাংশ (ভৌগোলিক ও ঐতিহাসিক) শ্রীঅচ্যুতচরণ চৌধুরী প্রণীত ৬০৬ পৃঃ মানচিত্র ও ২৩ খানি চিত্রযুক্ত। প্রকাশক শ্রীউপেন্দ্রনাথ পাল চৌধুরী, মূল্য ৪ টাকা। স্বদেশকে ভালবাসিতে হইলে তাহাকে ভাল করিয়া জানা চাই। তবেই স্বদেশ-প্রেমিকতা বৃথা ভাবোচ্ছাসে বিলীন হইয়া যায় না। প্রাকৃতিক অবস্থা, ইতিহাস, জীবনী, পুরাতত্ত্ব প্রভৃতি বিষয়ে আমরা নিজ জেলা ও প্রদেশ অপেক্ষা বিদেশের খবরই বেশী রাখি, কারণ আমাদের সকল জ্ঞানই পুথিগত, এবং এই সব বিভাগে বিদেশ সম্বন্ধে যথেষ্ট গ্রন্থ আছে স্বদেশ অন্ততঃ স্বজেলা সম্বন্ধে নাই। আবার, ক্রমে কালের স্রোতে পুরাতনের অনেক চিহ্ন, অনেক জনশ্রুতি লোপ পাইতেছে। সুতরাং জেলার ইতিহাস লেখার যে একটা চেষ্টা দেশময় জাগিয়া উঠিয়াছে, সেটা শুভলক্ষণ বলিয়া মনে করি। এই কাৰ্য্যে “শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত” লেখক যে প্রণালী অবলম্বন করিয়াছেন এবং যে শ্রেণীর গ্রন্থ রচনা করিয়াছেন তাহা আদর্শ স্বরূপ হইতে পারে। প্রথমতঃ ইহার উপকরণ সংগ্ৰহ সমবেত চেষ্টার ফল। যে সব বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ আবশ্যক, তাহার তালিকা ছাপাইয়া তিনবার দেশময় বিলাইয়া দেওয়া হইয়াছিল। এইরূপে কতক তথ্য হস্তগত হয়। তারপর গ্রামের শিক্ষকদের নিকট হইতে অনেক স্থানীয় বিবরণ লিখিয়া আনা হয়। (যদি লেখকগণ এই শ্রেণীর সংবাদদাতাদিগকে হেয় জ্ঞান না করিতেন তবে অনেক মূল্যবান তথ্য ইহাদের নিকট হইতে পাওয়া যাইত।) সর্বশেষ সরকারী মহাফেজ খানার কাগজ পত্র পরীক্ষা করা হয়। ফলতঃ ইউরোপ ইতিহাস লিখিতে আজ কাল যেরূপ সুশৃঙ্খল প্রণালী ও সমবেত চেষ্টা প্রয়োগ করা হইয়া থাকে, “শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত” বঙ্গদেশে তাহার একমাত্র দৃষ্টান্ত। যে পরিমাণে জেলার ইতিহাসের সঙ্গে দেশের ইতিহাসের অথবা মানবজাতির ভাবের ইতিহাসের সংযোগ স্থাপন করা যায়, সেই পরিমাণে তাহার প্রাদেশিকত্ব ঘুচিয়া যায়, ত্রিহট্ট, আগ্রা, আর্কট প্রভৃতি জেলাকে ভারত-ইতিহাস হইতে বিচ্ছিন্নভাবে দেখা যায় না। শ্রীহট্ট সেরূপ স্থান নহে। জেলার ইতিহাস লেখকেরা প্রায়ই দুইটি দোষ এড়াইতে পারে না, প্রথম জোর করিয়া মহাপুরুষদিগের সঙ্গে জেলার সম্বন্ধ স্থাপন করা। আগে আমরা ভ্রমণকারী পাণ্ডবভ্রাতাদের নিজ নিজ জেলায় টানিয়া আনিয়া কোন ভিটে বা জঙ্গলের সঙ্গে তাহদের গল্প যুড়িয়া দিতাম। এখন “বৈদ্ধ প্রভাব’টা ফেশান হইয়াছে। পরিত্যক্ত ইটের পাজ মাত্রেই প্রাচীন”—“বিহার। অভ্রান্ত চীন পৰ্য্যটক