পাতা:সংকলন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছেলে-ভুলানো ছড়া
১৬৭

আর নাচন কী।
অনেক সাধন ক’রে জাদু পেয়েছি।

 ভালোবাসা কখনো অনেককে এক করিয়া দেখে, কখনো এককে অনেক করিয়া দেখে, কখনো বৃহৎকে তুচ্ছ এবং কখনো তুচ্ছকে বৃহৎ করিয়া তুলে। “নাচ রে নাচ রে, জাদু, নাচনখানি দেখি।” নাচনখানি। যেন জাদু হইতে তাহার নাচনখানিকে পৃথক করিয়া একটি স্বতন্ত্র পদার্থের মতো দেখা যায়; যেন সেও একটি আদরের জিনিস। “খোকা যাবে বেড়ু করতে তেলিমাগীদের পাড়া। এস্থলে ‘বেড়ু করতে’ না বলিয়া ‘বেড়াইতে’ বলিলেই প্রচলিত ভাষার গৌরব রক্ষা করা হইত, কিন্তু তাহাতে খোকাবাবুর বেড়ানোর গৌরব হ্রাস হইত। পৃথিবীশুদ্ধ লোক বেড়াইয়া থাকে, কিন্তু খোকাবাবু ‘বেড়ু’ করেন। উহাতে খোকাবাবুর বেড়ানোটি একটু বিশেষ পদার্থরূপে প্রকাশ পায়।

খোকা এল বেড়িয়ে।
দুধ দাও গো জুড়িয়ে।
দুধের বাটি তপ্ত।
খোকা হলেন খ্যাপ্ত।
খোকা যাবেন নায়ে।
 লাল জুতুয়া পায়ে।

 অবশ্য, খোকাবাবু ভ্রমণ সমাধা করিয়া আসিয়া দুধের বাটি দেখিয়া ক্ষিপ্ত হইয়া উঠিয়াছেন সে-ঘটনাটি গৃহরাজ্যের মধ্যে একটি বিষম ঘটনা, এবং তাঁহার যে নৌকারোহণে ভ্রমণের সংকল্প আছে ইহাও ইতিহাসে লিপিবদ্ধ করিয়া রাখিবার যোগ্য, কিন্তু পাঠকগণ শেষ ছত্রের প্রতি বিশেষ লক্ষ্য করিয়া দেখিবেন। আমরা যদি সর্বশ্রেষ্ঠ ইংরেজের দোকান হইতে আজানু-সমুত্থিত বুট্ কিনিয়া অত্যন্ত মচ্ মচ্ শব্দ করিয়া বেড়াই, তথাপি লোকে তাহাকে জুতা অথবা জুতি বলিবে মাত্র। কিন্তু