পাতা:সংকলন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পাপের মার্জনা

 আমাদের প্রার্থনা সকল সময়ে সত্য হয় না, অনেক সময়ে মুখের কথা হয়— কারণ, চারিদিকে অসত্যের দ্বারা পরিবৃত হয়ে থাকি বলে আমাদের বাণীতে সত্যের তেজ পৌঁছয় না। কিন্তু ইতিহাসের মধ্যে, জীবনের মধ্যে এমন এক-একটি দিন আসে, যখন সমস্ত মিথ্যা একমুহূর্তে দগ্ধ হয়ে গিয়ে এমনই একটি আলোক জেগে ওঠে যার সামনে সত্যকে অস্বীকার করবার উপায় থাকে না। তখনি এই কথাটি বারবার জাগ্রত হয়— বিশ্বানি দেব সবিতদুর্রিতানি পরাসুব। হে দেব, হে পিতা, বিশ্বপাপ মার্জনা করো।

 আমরা তাঁর কাছে এ প্রার্থনা করতে পারি না— আমাদের পাপ ক্ষমা করো; কারণ তিনি ক্ষমা করেন না, সহ্য করেন না। তাঁর কাছে এই প্রার্থনাই সত্য প্রার্থনা— তুমি মার্জনা করো। যেখানে যত-কিছু পাপ আছে, অকল্যাণ আছে, বারম্বার রক্তস্রোতের দ্বারা, অগ্নিবৃষ্টির দ্বারা সেখানে তিনি মার্জনা করেন। যে-প্রার্থনা ক্ষমা চায় সে দুর্বলের ভীরুর প্রার্থনা, সে প্রার্থনা তাঁর দ্বারে গিয়ে পৌঁছবে না।

 আজ এই যে যুদ্ধের আগুন জ্বলেছে, এর ভিতরে সমস্ত মানুষের প্রার্থনাই কেঁদে উঠেছে— বিশ্বানি দুরিতানি পরসুব— বিশ্বপাপ মার্জনা করো। আজ যে-রক্তস্রোত প্রবাহিত হয়েছে সে যেন ব্যর্থ না হয়, রক্তের বন্যায় যেন পুঞ্জীভূত পাপ ভাসিয়ে নিয়ে যায়। যখনি পৃথিবীর পাপ স্তূপাকার হয়ে উঠে, তখনি তো তাঁর মার্জনার দিন আসে।