পাতা:সংকলন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পাপের মার্জনা
২৭৭

চলবে না। এইজন্যই আমাদের সকলকে দুঃখভোগ করবার জন্য প্রস্তুত হতে হবে। তা না হলে প্রায়শ্চিত্ত হয় না— সমস্ত মানুষের পাপের প্রায়শ্চিত্ত সকলকেই করতে হবে। যে-হৃদয় প্রীতিতে কোমল, দুঃখের আগুন তাকেই আগে দগ্ধ করবে। তার চক্ষে নিদ্রা থাকবে না। সে চেয়ে দেখবে, দুর্যোগের রাত্রে দূর দিগন্তে মশাল জ্বলে উঠেছে, বেদনায় মেদিনী কম্পিত করে রুদ্র আসছেন— সেই বেদনার আঘাতে তার হৃদয়ের সমস্ত নাড়ী ছিন্ন হয়ে যাবে। যার চিত্ততন্ত্রীতে আঘাত করলে সবচেয়ে বেশি বাজে, পৃথিবীর সমস্ত বেদনা তাকেই সবচেয়ে বেশি ক’রে বাজবে।

 তাই বলছি যে, সমস্ত মানুষের সুখদুঃখকে এক করে যে-একটি পরম বেদনা, পরম প্রেম আছেন, তিনি যদি শূন্য কথার-কথা মাত্র হতেন, তবে বেদনার এই গতি কখনোই এমন বেগবান হতে পারত না। ধনীদরিদ্র, জ্ঞানী-অজ্ঞানী, সকলকে নিয়ে সেই এক পরম, প্রেম চিরজাগ্রত আছেন ব’লেই এক জায়গার বেদনা সকল জায়গায় কেঁপে উঠছে। এই কথাটি আজ বিশেষভাবে অনুভব করো।

 তাই এ কথা আজ বলবার কথা নয় যে, অন্যের কর্মের ফল আমি কেন ভোগ করব। হাঁ, আমিই ভোগ করব, আমি নিজে একাকী ভোগ করব, এই কথা বলে প্রস্তুত হও। নিজের জীবনকে শুচি করো, তপস্যা করো, দুঃখকে গ্রহণ করো। তোমাকে যে নিজের পাপের সঙ্গে ভীষণ যুদ্ধ করতে হবে, নিজের রক্তপাত করতে হবে, দুঃখে দগ্ধ হয়ে হয়তো মরতে হবে। কারণ, তোমার নিজের জীবনকে যদি পরিপূর্ণরূপে উৎসর্গ না কর তবে পৃথিবীর জীবনের ধারা নির্মল থাকবে কেমন করে, প্রাণবান হয়ে উঠবে কেমন করে। ওরে তপস্বী, তপস্যায় প্রবৃত্ত হতে হবে, সমস্ত জীবনকে আহুতি দিতে হবে, তবেই যদ্‌ভদ্রং তৎ— যা ভদ্র তাই আসবে। ওরে তপস্বী, দুঃসহ দুর্ভর দুঃখভারে