পাতা:সংকলন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সভ্যতা
৪৭

সকল বিষয়েই তাহার স্বাতন্ত্র্য ও বৈচিত্র্য দেখা যায়, কেবল একটা বিষয়ে তাহার ঐক্য দেখিতে পাই। তাহা রাষ্ট্রীয় স্বার্থ।

 ইংলণ্ডে বলো, ফ্রান্সে বলো, আর-সকল বিষয়েই জনসাধারণের মধ্যে মতবিশ্বাসের প্রভেদ থাকিতে পারে, কিন্তু স্ব স্ব রাষ্ট্রীয় স্বার্থ প্রাণপণে রক্ষা ও পোষণ করিতে হইবে, এ-সম্বন্ধে মতভেদ নাই। সেইখানে তাহারা একাগ্র, তাহারা প্রবল, তাহারা নিষ্ঠুর, সেইখানে আঘাত লাগিলেই সমস্তদেশ একমূর্তি ধারণ করিয়া দণ্ডায়মান হয়। জাতিরক্ষা আমাদের যেমন একটা গভীর সংস্কারের মতো হইয়া গেছে, বাষ্ট্রীয় স্বার্থরক্ষায়ুরোপের সর্বসাধারণের তেমনি একটি অন্তর্নিহিত সংস্কার।

 ইতিহাসের কোন্ গূঢ় নিয়মে দেশবিশেষের সভ্যতা ভাববিশেষকে অবলম্বন করে তাহা নির্ণয় করা কঠিন; কিন্তু ইহা সুনিশ্চিত যে, যখন সেই ভাব তাহার অপেক্ষা উচ্চতর ভাবকে হনন করিয়া বসে তখন ধ্বংস অদূরবর্তী হয।

 প্রত্যেক জাতির যেমন একটি জাতিধর্ম আছে, তেমনি জাতিধর্মের অতীত একটি শ্রেষ্ঠ ধর্ম আছে যাহ। মানবসাধারণের। আমাদের দেশে বর্ণাশ্রমধর্ম যখন সেই উচ্চতর ধর্মকে আঘাত করিল, তখন ধর্ম তাহাকে প্রতিঘাত করিল:

ধর্ম এব হতো হন্তি ধর্মো রক্ষতি রক্ষিতঃ।

 একসময় আর্যসভ্যতা আত্মরক্ষার জন্য ব্রাহ্মণশূদ্রে দুর্লঙ্ঘ্য ব্যবধান রচনা করিয়াছিল। কিন্তু ক্রমে সেই ব্যবধান বর্ণাশ্রমধর্মের উচ্চতর ধর্মকে পীড়িত করিল। বর্ণাশ্রম আপনাকে রক্ষা করিবার জন্য চেষ্টা করিল কিন্তু ধর্মকে রক্ষার জন্য চেষ্টা করিল না। সে যখন উচ্চ অঙ্গের মনুষ্যত্বচর্চা হইতে শূদ্রকে একেবারে বঞ্চিত করিল তখন ধর্ম তাহার প্রতিশোধ লইল। তখন ব্রাহ্মণ্য আপন জ্ঞানধর্ম লইয়া পূর্বের