পাতা:সংকলন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭২
সংকলন

হইতে পারে, আমি তাহারই একটি দৃষ্টান্ত দিলাম মাত্র, এবং এই উপলক্ষ্যটিকে নিয়মে বাঁধিয়া আয়ত্তে আনিয়া, কী করিয়া যে একটা দেশব্যাপী মঙ্গল-ব্যাপারে পরিণত করা যাইতে পারে, তাহারই আভাস দেওয়া গেল।

 যাঁহারা রাজদ্বারে ভিক্ষাবৃত্তিকে দেশের সর্বপ্রধান মঙ্গলব্যাপার বলিয়া গণ্য করেন না তাঁহাদিগকে অন্য পক্ষ “পেসিমিস্ট” অর্থাৎ আশাহীনের দল নাম দিয়াছেন। অর্থাৎ রাজার কাছে কোনো আশা নাই বলিয়া যেন আমরা হতাশ্বাস হইয়া পড়িয়াছি।

 আমরা স্পষ্ট করিয়া বলিতেছি, রাজা আমাদিগকে মাঝে মাঝে লগুড়াঘাতে তাঁহার সিংহদ্বার হইতে খেদাইতেছেন বলিয়াই যে অগত্যা আত্মনির্ভরকে শ্রেয়োজ্ঞান করিতেছি, কোনোদিনই আমি এরূপ দুর্লভদ্রাক্ষাগুচ্ছলুব্ধ হতভাগ্য শৃগালের সান্ত্বনাকে আশ্রয় করি নাই। আমি এই কথাই বলি, পরের প্রসাদভিক্ষাই যথার্থ “পেসিমিস্ট” আশা হীন দীনের লক্ষণ। গলায় কাছা না লইলে আমাদের গতি নাই, এ-কথা আমি কোনোমতেই বলিব না, আমি স্বদেশকে বিশ্বাস করি, আমি আত্মশক্তিকে সন্মান করি। আমি নিশ্চয় জানি যে, যে-উপায়েই হউক, আমরা নিজের মধ্যে ঐক্য উপলব্ধি করিয়া আজ যে সার্থকতালাভের জন্য উৎসুক হইয়াছি, তাহার ভিত্তি যদি পরের পরিবর্তনশীল প্রসন্নতার উপরেই প্রতিষ্ঠিত হয়, তবে তাহা পুনঃপুনই ব্যর্থ হইতে থাকে। অতএব ভারতবর্ষের যথার্থ পথটি যে কী, আমাদিগকে চারিদিক হইতেই তাহার সন্ধান করিতে হইবে।

 মানুষের সঙ্গে মানুষের আত্মীয়সম্বন্ধ স্থাপনই চিরকাল ভারতবর্ষের সর্বপ্রধান চেষ্টা ছিল। আমরা যে-কোনো মানুষের সংস্রবে আসি, তাহার সঙ্গে একটি সম্বন্ধ নির্ণয় করিয়া বসি। এইজন্য কোনো অবস্থায় মানুষকে আমরা আমাদের কার্যসাধনার কল বা কলের