পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪৪
সোনার তরী

শুধু এক ঠাঁই; বিরহে টুটিয়া বাধা
আজি বিশ্বময় ব্যাপ্ত হয়ে গেছ, প্রিয়ে,
তোমারে দেখিতে পাই সর্বত্র চাহিয়ে।
ধূপ দগ্ধ হয়ে গেছে, গন্ধবাষ্প তার
পূর্ণ করি ফেলিয়াছে আজি চারি ধার।
গৃহের বনিতা ছিলে, টুটিয়া আলয়
বিশ্বের কবিতারূপে হয়েছ উদয়।
তবু কোন্ মায়াডোরে চিরসোহাগিনি
হৃদয়ে দিয়েছ ধরা, বিচিত্র রাগিণী
জাগায়ে তুলিছ প্রাণে চিরস্মৃতিময়।
তাই তো এখনো মনে আশা জেগে রয়,
আবার তোমারে পাব পরশবন্ধনে।
এমনি সমস্ত বিশ্ব প্রলয়ে সৃজনে
জ্বলিছে নিবিছে, যেন খদ্যোতের জ্যোতি—
কখনো বা ভাবময়, কখনো মুরতি।

রজনী গভীর হল, দীপ নিবে আসে।
পদ্মার সুদুর পারে, পশ্চিম আকাশে
কখন যে সায়াহ্নের শেষ স্বর্ণরেখা
মিলাইয়া গেছে; সপ্তর্ষি দিয়েছে দেখা
তিমিরগগনে; শেষ ঘট পূর্ণ ক’রে
কখন্ বালিকাবধূ চলে গেছে ঘরে।
হেরি কৃষ্ণপক্ষ রাত্রি, একাদশী তিথি,
দীর্ঘপথ, শূন্যক্ষেত্র, হয়েছে অতিথি
গ্রামে গৃহস্থের ঘরে পান্থ পরবাসী।
কখন্‌ গিয়েছে থেমে কলরবরাশি
মাঠপারে কৃষিপল্লী হতে; নদীতীরে
বৃদ্ধ কৃষাণের জীর্ণ নিভৃত কুটিরে