পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কথা
৩৩৭

রাখাল লুকায়ে মুখ কাঁপিছে নীরবে।
তখন বিপন্ন মাঝি ডাকি কহে সবে,
‘বাবারে দিয়েছে ফাঁকি তোমাদের কেউ,
যা মেনেছে দেয় নাই, তাই এত ঢেউ—
অসময়ে এ তুফান। শুন এই বেলা,
করহ মানত রক্ষা, করিয়ো না খেলা
ক্রূদ্ধ দেবতার সনে।’ যার যত ছিল
অর্থ বা যাহা-কিছু জলে ফেলি দিল
না করি বিচার। তবু, তখনি পলকে
তরীতে উঠিল জল দারুণ ঝলকে।
মাঝি কহে পুনর্বার, ‘দেবতার ধন
কে যায় ফিরায়ে লয়ে, এই বেলা শোন্।’
ব্রাহ্মণ সহসা উঠি কহিলা তখনি
মোক্ষদারে লক্ষ্য করি, ‘এই সে রমণী
দেবতারে সঁপি দিয়া আপনার ছেলে
চুরি করে নিয়ে যায়।’ ‘দাও তারে ফেলে’
একবাক্যে গর্জি উঠে তরাসে নিষ্ঠুর
যাত্রী সবে। কহে নারী, ‘হে দাদাঠাকুর,
রক্ষা করো, রক্ষা করো।’ দুই দৃঢ় করে
রাখালেরে প্রাণপণে বক্ষে চাপি ধরে।

ভর্ৎসিয়া গর্জিয়া উঠি কহিলা ব্রাহ্মণ,
‘আমি তোর রক্ষাকর্তা! রোষে নিশ্চেতন
মা হয়ে আপন পুত্র দিলি দেবতারে,
শেষকালে আমি রক্ষা করিব তাহারে!
শোধ দেবতার ঋণ, সত্য ভঙ্গ ক’রে
এতগুলি প্রাণী তুই ডুবাবি সাগরে!’

মোক্ষদ। কহিল, ‘অতি মূর্খ নারী আমি,