পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৬৬
উৎসর্গ

নিশার আকাশ কেমন করিয়া তাকায় আমার পানে সে,
লক্ষযোজন দূরের তারকা মোর নাম যেন জানে সে।
যে ভাষায় তারা করে কানাকানি
সাধ্য কী আর মনে তাহা আনি,
চিরদিবসের ভুলে যাওয়া বাণী কোন্ কথা মনে আনে সে!
অনাদি উষার বন্ধু আমার তাকায় আমার পানে সে।

এ সাত-মহলা ভবনে আমার চিরজনমের ভিটাতে
স্থলে জলে আমি হাজার বাঁধনে বাঁধা যে গিঁঠাতে গিঁঠাতে!
তবু হায় ভুলে যাই বারে বারে,
দূরে এসে ঘর চাই বাঁধিবারে—
আপনার বাঁধা ঘরেতে কি পারে ঘরের বাসনা মিটাতে।
প্রবাসীর বেশে কেন ফিরি হায় চিরজনমের ভিটাতে।

যদি চিনি, যদি জানিবারে পাই, ধুলারেও মানি আপনা—
ছোটো বড়ো হীন সবার মাঝারে করি চিত্তের স্থাপনা।
হই যদি মাটি, হই যদি জল,
হই যদি তৃণ, হই ফুলফল,
জীব-সাথে যদি ফিরি ধরাতল, কিছুতেই নাই ভাবনা।
যেথা যাব সেথা অসীম বাঁধনে অন্তবিহীন আপনা।

বিশাল বিশ্বে চারি দিক হতে প্রতি কণা মোরে টানিছে।
আমার দুয়ারে নিখিল জগৎ শতকোটি কর হানিছে।
ওরে মাটি, তুই আমারে কি চাস?
মোর তরে জল দু হাত বাড়াস?
নিশ্বাসে বুকে পশিয়া বাতাস চির-আহ্বান আনিছে।
পর ভাবি যারে তারা বারে বারে সবাই আমারে টানিছে।