পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
খেয়া
৫০১

আমি সুদূর-পানে চেয়ে চেয়ে ভাবি আপন-মনে
হেথা তৃণে আসন মেলে—
তুমি হঠাৎ কখন আসবে হেথায় বিপুল আয়োজনে
তোমার সকল আলো জ্বেলে।
তোমার রথের ’পরে সোনার ধ্বজা ঝলবে ঝলমল,
সাথে বাজবে বাঁশির তান—
তোমার প্রতাপ-ভরে বসুন্ধরা করবে টলমল,
আমার উঠবে নেচে প্রাণ।

তখন পথের লোকে অবাক হয়ে সবাই চেয়ে রবে,
তুমি নেমে আসবে পথে।
হেসে দু হাত ধ’রে ধুলা হতে আমায় তুলে লবে—
তুমি লবে তোমার রথে।
আমার ভূষণ-বিহীন মলিন বেশে ভিখারিনির সাজে
তোমার দাঁড়াব বাম পাশে,
তখন লতার মতো কাঁপব আমি গর্বে সুখে লাজে
সকল বিশ্বের সকাশে।


ওগো, সময় বয়ে যাচ্ছে চলে, রয়েছি কান পেতে—
কোথা  কই গো চাকার ধ্বনি!
তোমার এ পথ দিয়ে কত-না লোক গর্বে গেল মেতে
কতই জাগিয়ে রনরনি।
তবে তুমিই কি গো নীরব হয়ে রবে ছায়ার তলে,
তুমি  রবে সবার শেষে!
হেথায় ভিখারিনির লজ্জা কি গো ঝরবে নয়ন-জলে—
তারে রাখবে মলিন বেশে?

শান্তিনিকেতন
২ আষাঢ় ১৩১৩