পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬২
মানসী

কোথা সেই পুরাতন রবি শশী তারাগণ,
কোথা আপনার ধন ধরণীর কোল!
আজন্মের স্নেহসার কোথা সেই ঘরদ্বার—
পিশাচী এ বিমাতার হিংস্র উতরোল!
যে দিকে ফিরিয়া চাই পরিচিত কিছু নাই,
নাই আপনার—
সহস্র করাল মুখ সহস্র আকার।

ফেটেছে তরণীতল, সবেগে উঠিছে জল,
সিন্ধু মেলে গ্রাস।
নাই তুমি ভগবান, নাই দয়া, নাই প্রাণ—
জড়ের বিলাস।
ভয় দেখে ভয় পায়, শিশু কাঁদে উভরায়—
নিদারুণ ‘হায় হায়’ থামিল চকিতে।
নিমেষেই ফুরাইল— কখন জীবন ছিল
কখন জীবন গেল নারিল লখিতে।
যেন রে একই ঝড়ে নিভে গেল একত্তরে
শত দীপ-আলো—
চকিতে সহস্র গৃহে আনন্দ ফুরালো।

প্রাণহীন এ মত্ততা না জানে পরের ব্যথা
না জানে আপন।
এর মাঝে কেন রয় ব্যথাভরা স্নেহময়
মানবের মন!
মা কেন রে এইখানে,  শিশু চায় তার পানে,
ভাই সে ভায়ের টানে কেন পড়ে বুকে—
মধুর রবির করে কত ভালোবাসা-ভরে
কত দিন খেলা করে কত সুখে দুখে।