শুনিয়া অনুকূল ভাবে ঘাড় নাড়িতে লাগিলেন। উৎসাহিত হইয়া দক্ষ মহাদেবের প্রতি যথেষ্ট কটুক্তিবর্ষণ করিলেন।
বৃষভের পার্শ্বে শূলহস্তে নন্দী দাঁড়াইয়াছিল। তাহার সর্ব্বদেহ ক্রোধে কম্পিত হইতে লাগিল। ক্রোধে তাহার দুইটি চক্ষের তারা ছুটিয়া যাইবার মত হইয়াছিল। সে বিক্ষুব্ধ বারিধির ন্যায় অস্ফুট-গর্জ্জন মাত্র করিতেছিল, মহাদেবের ইঙ্গিতে কোন কথা স্পষ্ট করিয়া বলিতে সাহস পায় নাই। বৃষটিও যেন শিবনিন্দায় ব্যথিত হইয়া দুই চক্ষু হইতে অশ্রু ত্যাগ করিতেছিল।
শিব কোন কথাই বলেন নাই, তিনি একবার ঊর্দ্ধচক্ষু নত করিয়া দক্ষের প্রতি দৃষ্টি করিয়াছিলেন। সে দৃষ্টিতে ক্রোধ ছিল না, ক্ষমা ছিল।—ব্যথার চিহ্নমাত্র ছিল না, করুণার স্নিগ্ধতা ছিল। দাম্ভিক দক্ষ ভাবিলেন, শিবের এই ভাব—ঘৃণার ছদ্মবেশমাত্র। তিনি ক্রোধে আরও জ্বলিয়া উঠিলেন।
যজ্ঞ শেষ হইয়া গেল। যাঁহার ভস্ম ও চন্দনে সমজ্ঞান, এমন মহাদেবের নিকট আদর ও ঘৃণার তারতম্য কি?
জগতের হলাহল একমাত্র শিবই পান করিতে সমর্থ এবং হলাহলসিন্ধু-মন্থন করিয়া যে অমৃতের উৎপত্তি হয়, একমাত্র শিবই তাহার ভোক্তা। দেবসভা হইতে যে ঘৃণা ও কটূক্তির বর্ষণ হইল, তাহা মর্ম্মরপ্রস্তরের উপর বারিবর্ষণের ন্যায় তাঁহার চিত্তে কোন রেখা আঁকিয়া গেল না। তাঁহার বিশাল জটাজুটে গঙ্গার যে মৃদু-মধুর কলরব হইতেছিল, আনন্দময়ের তাহাতেই পরমানন্দ জাগিয়া উঠিল। তিনি তাঁহার কর-ধৃত বিষাণ বাদনপূর্ব্বক আনন্দধ্বনিতে আকাশ কম্পিত করিয়া কৈলাসপু্রীতে প্রত্যাগত হইলেন। সমুদ্রমন্থনকালে দেবগণ অমৃতের ভাগ