দক্ষযজ্ঞে সতীর দেহ-ত্যাগের উপাখ্যান সকলেই অবগত আছেন, সেই উপাখ্যানটি গল্পচ্ছলে এই পুস্তকে লিখিত হইয়াছে। “বেহুলা” ও “ফুল্লরা” লিখিতে যাইয়া প্রাচীন সাহিত্যের যেরূপ অজস্র উপকরণ দ্বারা আমি সহায়বান্ হইয়াছিলাম, দাক্ষায়ণী সতীর বৃত্তান্ত লিখিতে আমি তদ্রূপ সাহায্য অতি সামান্যই পাইয়াছি। মাধবাচার্য্য, মুকুন্দরাম, ভারতচন্দ্র ও জয়নারায়ণ প্রভৃতি বহুসংখ্যক প্রাচীন বঙ্গীয় কবি এ সম্বন্ধে যে কিছু বিবরণ দিয়াছেন তাহা অতি সামান্য, আমি তাহা হইতে আহরণ করিবার উপযোগী উপকরণ অতি অল্পই পাইয়াছি। ভারতচন্দ্রের বর্ণিত শিবের ক্রোধ ও দক্ষযজ্ঞ-নাশ—ছন্দের ঐশ্বর্য্য ও ভাষাসম্পদে উক্ত কবির অমর কীর্ত্তিস্বরূপ প্রাচীন কাব্যসাহিত্যে প্রতিষ্ঠা লাভ করিয়াছে। কিন্তু ভুজঙ্গপ্রয়াতছন্দ ভাঙিয়া কথাগুলি গদ্যে পরিণত করিলে কবির অপূর্ব্ব শব্দমন্ত্রের মোহিনী শক্তি নষ্ট হয়, সুতরাং অন্নদামঙ্গল হইতে আমি উপকরণ সংগ্রহের তাদৃশ সুবিধা প্রাপ্ত হই নাই। অপরাপর বঙ্গীয় কবিগণকৃত এই বিষয়ের বর্ণনা অতি সংক্ষিপ্ত, এমন কি উল্লেখযোগ্যই নহে। শ্রীমদ্ভাগবতে দক্ষযজ্ঞের বর্ণনা কতকটা সবিস্তর, আমি তাহাই কথঞ্চিৎ অবলম্বনপূর্ব্বক এই গল্পটি লিখিয়াছি।
এই উপাখ্যানসংক্রাস্ত একটি কৈফিয়ৎ আমাকে দিতে হইবে। এ দেশের লোকের প্রচলিত বিশ্বাস যে, মহাদেব যখন সতীকে দক্ষালয়ে যাইতে নিষেধ করিয়া ছিলেন, তখন সতী দশমহাবিদ্যার বিচিত্ররূপ ধারণপূর্বক স্বামীকে ভয় দেখাইয়াছিলেন। আমি এই অংশ উপাখ্যান-