পাতা:সতী-দীনেশচন্দ্র সেন.djvu/৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
সতী

 তখন বিষ্ণু সূক্ষ্মরূপে অধিষ্ঠান করিয়া চক্র দ্বারা সতীর দেহ খণ্ড বিখণ্ড করিয়া কাটিয়া ফেলিলেন।

 যেখানে ভারতীয় উপসাগর গুর্জ্জর-দেশের শৈল-কঠিন তটদেশে তরঙ্গাভিঘাত করিতেছে, সেই করাচির উত্তরস্থিত ছিঙগুলায় সতীর ব্রহ্মরন্ধ্র পতিত হইল।

 পঞ্চনদের তীরে আম্বালার সন্নিহিত চিত্রিত মেঘমালার ন্যায় পর্ব্বতশ্রেণীর উপান্তে জ্বালামুখীতে বিষ্ণুচক্রকর্ত্তিত হইয়া সতীর জিহ্বা পতিত হইল।

 বঙ্গদেশের দক্ষিণ প্রান্তস্থিত, বঙ্গোপসাগর-চুম্বিত তালখর্জ্জুরনিষেবিত বাক্‌লাপরগণান্তর্গত শিকারপুর সন্নিহিত সুগন্ধায় দেবীর নাসিকা পতিত হইল।

 বীরভূম জেলার অন্তর্গত আমোদপুরের সন্নিহিত লাভ-পুরে দেবীর ওষ্ঠ,—সীতাবিরহ-খিন্ন রামচন্দ্রের পদচারণপুণ্য জন-স্থানে দেবীর চিবুক, ভূস্বর্গ কাশ্মীরে দেবীর কণ্ঠ, কালীঘাটে অঙ্গুলী, বারাণসীতে কুণ্ডল, এই প্রকার ৫১ ভাগে বিভক্ত দেবীর অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিভিন্ন স্থানে পতিত হইল। সমস্ত ভারতবর্ষের সেই পুণ্য দেহাবশেষ বিক্ষিপ্ত হইয়া তত্তৎস্থান-সমূহকে পীঠস্থানে পরিণত করিল। সেই পুণ্যে ভারতবর্ষে পাতিব্রত্য ধর্ম্ম প্রতিষ্ঠা পাইল। এদেশে যে রমণী স্বামী-প্রেমে প্রাণত্যাগ করেন, তিনি অদ্যাপি সতীর নামে পরিচিত হইয়া থাকেন। ভারতবর্ষের শত শত অজ্ঞাত পল্লীতে যজ্ঞাগ্নির ন্যায় পবিত্র চিতাগ্নিতে যুগে যুগে মহিলাগণ স্বামীপ্রেমে আত্মোৎসর্গ করিয়া ‘সতী’ নামে পূজা পাইয়াছেন।

 এখনও স্বামী-নিন্দাসহনাক্ষম সাধ্বীর নিশ্বাস এদেশের অন্তঃপুরকে

৫৭