পাতা:সবুজ পত্র (তৃতীয় বর্ষ) - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Y Yto সবুজ পত্ৰ জ্যৈষ্ঠ, ১৩২৩ পৰ্যন্ত জুড়ে সমস্ত রাস্তা ঠেসে ভৰ্ত্তি করে” ডেক-প্যাসেঞ্জার বসে। বহু কষ্টে তাদের ভিতর দিয়ে পথ করে ক্যাবিনের মধ্যে গিয়ে শুয়ে পড়লুম। এইবার সমস্ত শরীর মন ঘুলিয়ে উঠল। মনে হল দেহের সঙ্গে প্ৰাণের আর বনতি হচ্চে না ; দুধ মথন করলে মাখনটা যে রকম ছিন্ন হয়ে আসে প্ৰাণটা যেন তেমনি হয়ে এসেচে। জাহাজের উপরকার দোলা সহ্য করা যায়, জাহাজের ভিতরকার দোলা সহ করা শক্ত। কঁকারের উপর দিয়ে চলা, আর জুতোর ভিতরে কঁকার নিয়ে চলার যে তফাৎ, এ যেন তেমনি। একটাতে মার আছে বন্ধন নেই, আর একটা বেঁধে মারি । ক্যাবিনে শুয়ে শুয়ে এক একবার শুনতে পেলুম ডেকের উপর কি যেন সব হুড়মুড় করে ভেঙ্গে ভেঙ্গে পড়চে। ক্যাবিনের মধ্যে হাওয়া আসবার জন্যে যে ফানেল গুলো ডেকের উপর হঁা করে নিশ্বাস নেয়, ঢাকা দিয়ে তাদের মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়েচে,-কিন্তু ঢেউয়ের প্ৰবল চোটে তার ভিতর দিয়েও ঝলকে বালকে ক্যাবিনের মধ্যে জল এসে পড়চে । বাইরে উনপঞ্চাশ বায়ুর নৃত্য, অথচ ক্যালিনের মধ্যে গুটি । একটা ইলেকটিক পাখা চলচে, তাতে যেন তাপটকে আরো চারিয়ে দিচ্চে। হঠাৎ মনে হয় এ একেবারে অসহ্য । কিন্তু মানুষের মধ্যে শরীর মন প্ৰাণের চেয়েও বড় একটা সত্তা আছে। ঝড়ের আকাশের উপরেও যেমন শান্ত আকাশ, তুফানের সমুদ্রের নীচে যেমন শান্ত সমুদ্ৰ-সেই আকাশ সেই সমুদ্রই যেমন বড় ; মানুষের অন্তরের গভীরে এবং সমুচ্চে সেইরকম এক একটি বিরাট শান্ত পুরুষ মাছে