পাতা:সবুজ পত্র (তৃতীয় বর্ষ) - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় বর্ষ, তৃতীয় সংখ্যা আহুতি । আতুরকে ঔষধপথ্য দান এদের নিত্যকৰ্ম্মের মধ্যে ছিল। অনুগত আশ্রিত লোকের লেখাযোখা ছিল না। এঁদের প্রদত্ত ব্ৰহ্মোত্তরের প্রসাদে দেশের গুরুপুরোহিতের দল সব জোৎদার হয়ে উঠেছিলেন । তারপর পুজা আৰ্চা, দোল দুৰ্গোৎসবে তারা অকাতরে অর্থ ব্যয় করতেন। রুদ্রপুরে দোলের সময় আকাশ আবীরে, ও পূজোর সময় পৃথিবী রুধিরে লাল হয়ে উঠত। রুদ্রপুরের অতিথিশালায় নিত্য একশত অতিথি-ভোজনের আয়োজন থাকত । পিতৃদায় মাতৃদায় কন্যাদায়গ্ৰস্ত কোনও ব্রাহ্মণ, রুদ্রপুরের বাবুদের দ্বারস্থ হয়ে কখনও রিক্তহস্তে ফিরে যায় নি । এরা বলতেন ব্ৰাহ্মাণের ধন বঁাধবার জন্য নয়-সৎকাৰ্য্যে ব্যয় করবার জন্য । সুতরাং সৎকাৰ্য্যে ব্যয় করবার টাকার যদি কখনও অভাব হত, তাহলে বাবুরা সে টাকা সী-মহাজনদের ঘর লুঠে নিয়ে আসুতেও কুষ্ঠিত হতেন না। এক কথায়, এরা ভাল কাজ মন্দ কাজ সব নিজের খেয়াল ও মার্জি অনুসারে করতেন ; কেননা নবাবের আমলে তঁদের কোনও শাসনকর্তা ছিল না । ফলে, জনসাধারণে তাদের যেমন ভয় করত, তেমনি ভক্তিও করত,-তার কারণ র্তার জনসাধারণকে ভক্তিও করতেন না, ভয়ও করতেন না । এই অবাধ যথেচ্ছাচারের ফলে তঁদের মনে নিজেদের শ্ৰেষ্ঠত্ব সম্বন্ধে ধারণা উত্তরোত্তর অসাধারণ বৃদ্ধিলাভ করেছিল। উীদের মনে যা ছিল, সে হচ্ছে জাতির অহঙ্কার, ধনের অহঙ্কার, বলের অহঙ্কার, রূপের অহঙ্কার। রায় পরিবারের পুরুষেরা সকলেই গৌরবর্ণ, দীর্ঘাকৃতি ও বলিষ্ঠ ছিলেন, এবং তঁদের ঘরের মেয়েদের রূপের খ্যাতি দেশময় ছড়িয়ে পড়েছিল। এই সব কারণে মানুষকে মানুষ জ্ঞান করী এদের পক্ষে একরকম অসম্ভব হয়ে উঠেছিল। R