পাতা:সবুজ পত্র (পঞ্চম বর্ষ) - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সবুজ পত্র জ্যৈষ্ঠ, ১৩২৫ এক রকম বৈজ্ঞানিক জ্যামিতি তৈরি করা হয়েছে। সে জ্যামিতি দেখলে যে, ভদ্র-সন্তানের গায়ে জ্বর আসে, তার কারণ তাতে মাল ঢের বেশী থাকতে পারে কিন্তু গড়ন মোটেই নেই। ইউক্লিডের প্রথম অধ্যায়ের পঞ্চম প্রতিজ্ঞা গর্দভের কাছে সেতু হতে পারে, কিন্তু মানুষের কাছে তা পিরামিডেরই মানসী-মূর্তি এবং তা আর্ট হিসেবে পিরামিডের মতই উচ্চ। আর এক কথা ইউক্লিডের জ্যামিতি যে গ্রীসের সকল আর্টের স্বগােত্র, তার কারণ সে-সকল আর্টের ভিতরেও জ্যামিতি আছে। পার্থিননের সকল রেখাই সরল রেখা এবং তা আকারে চতুষ্কোণ এবং তার সকল ভূষণ ত্রিকোণ, অবশ্য সম-ত্রিকোণ আর অসম ত্রিকোণ, বিষম নয়। গ্রীকদের এ জ্ঞান ছিল যে আকাশই বস্তুকে রূপ দেয় তাই গ্রীসের স্থাপত্যে, রেখা ও রেখার মধ্যে যথেষ্ট অবকাশ আছে আর্থাৎ আকাশের স্থান আছে। মানুষের বন্ধুর দেহটাকে যতটা সরল রেখার কাছাকাছি আনা যায় গ্রীক-ভাস্করের তা করতে ক্রটি করেন নি। গ্রীসের Statue-এর দেহকে সত্যসত্যই দেহষ্ঠি বলা যায়। আমাদের দেশের ভাস্কর্যে দেহের যে অঙ্গ উন্নত তাকে আরও উন্নত করা হয়েছে আর যে অঙ্গ অবনত তাকে আরও অবনত করা হয়েছে। অর্থাৎ অঙ্গ প্রত্যঙ্গের স্বাভাবিক জাতিভেদ অস্বাভাবিক রকম ফুটিয়ে তােলা ও পিটিয়ে ফেলা হয়েছে। উঁচু-নীচুর জ্ঞান আমাদের তুল্য আর কোন জাতের আছে ? গ্রীসের ভাস্কর্যের পদ্ধতি ঠিক এর সে দেশের শিল্পীর দেহের সুষমা ও সামঞ্জস্য সম্পূর্ণ করবার এ যা অস তাকে সম করে তুলেছে আর যা বিষম তাকে অসম করেছে। অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সাম্য ও মৈত্রর উপরেই যে দেহের সৌন্দৰ্য্য উল্টো।