পাতা:সবুজ পত্র (পঞ্চম বর্ষ) - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সবুজ পত্র আষাঢ়, ১২৫ বলতে ভুলে গেছি—ইতিমধ্যে বাবা স্বর্গারােহণ করেছেন। মা আবার নূতন করে কনের সন্ধান আরম্ভ করে দিলেন তার ৫০ বৎসরের তরুণ ছেলেটির জন্য, আর তার ৫০ বৎসরের তরুণ ছেলেটি চুপ করে থেকে তার সম্মতি জানিয়ে দিলে তরুণ ছেলেটিরই মত করে। ফুলশয্যার রাত্রেই ষোড়শী স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করলুম, “তুমি আমাকে ভালবাস।” কথাটা বড়ই অসংলগ্ন হয়েছিল সন্দেহ নেই—কিন্তু আমি নাচার। কমলা উত্তর দিয়েছিল, “হ্যা”। দিন কাটতে লাগলো; এবার মনে মনে স্থির করেছিলুম পা-টাকে যথাসম্ভব গুটিয়ে রাখবে, যাতে এবার আর সে পা দেখতে না পায় কিন্তু এটা তখন বুদ্ধিতে আসে নি যে, পা বাদ দিলেও বুক ছাড়া অন্য আরও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আছে যার উপর মানুষ খুব স্বচ্ছন্দে চড়ে বসতে পারে। কমলা পা দেখতে পায় নি সন্দেহ নেই কিন্তু সে বুকও দেখতে পায় নি, সে দেখে ফেলেছিল কেবল পাকাচুলে ভরা গােল মাথাটা আর সেই খানেই সে তার চিরদিনের আসন খানি টেনে নিয়ে গিয়ে খুব নিশ্চিন্ত ভাবে বসিয়ে দিয়েছিল। এক কথায় দোজ-পক্ষের পরিবার যেমন হয়ে থাকে কমলা তার চেয়ে একটু কমও হয় নি একটু বেশীও হয় নি। নেশা করার দরুণ পায়ের তরফ থেকে নীরদা কোন কথা বলতে সাহসই করে নি আর মাথার তরফ থেকে কমলা যা বলেছিল তার বিষ তার নিজের রাজত্ব থেকে আরম্ভ করে নীরদার রাজত্ব পৰ্যন্ত চারিয়ে গেছলাে। কিছু-না-বলার ভিতর দিয়ে নীরা নিজেকে আমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল—আর কমলা যা বলেছিল তার তীব্রতা আমাকেই দূর করে দিয়েছিল তার কাছ থেকে, বড়লােকের ফরোয়ানের মত করে।