পাতা:সবুজ পত্র (পঞ্চম বর্ষ) - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

baby সবুজ পত্র আষাঢ়, ১৩২০ দেখল। বৃদ্ধ তেমনি তার দিকে পিঠ ফিরে জাল ফেলছিল। প্রসাদ ধীরে ধীরে নিঃশব্দে তার হাতের বৈঠাটী ভেলার ওপরে রেখে দিল। তারপর ধীরে ধীরে তার দু পা জলে নামিয়ে দিল। ধীরে ধীরে ভেলার কাঠ ধরে আপনাকে জলে নামিয়ে দিল। কোমর, বুক, ক), চিবুক, নাসিকা, চক্ষু, ললাট, মস্তক, মস্তকের কেশরাশি ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে গেল। দ্বিগুণ উৎসাহে লক্ষ লক্ষ ঊর্মিবালার চিকচিক ঝিক-ঝিক করে উঠল—যেখানটায় সাগরের বুক চিরে প্রসাদের সমস্ত শরীরটা অদৃশ্য হয়ে গেল সেখানটার উপর দিয়ে মহা ছুটোছুটি লাগিয়ে দিল আর খিলখিল করে হাসতে লাগল। “বৈঠে ঠেলছিস না ক্যান রে প্রসাদ ?” যখন প্রসাদের কোন উত্তর মিলল না, তখন শ্ৰীমন্ত মুখ ফিরিয়ে চেয়ে দেখল-দে শুধু শূন্য-প্রসাদ যেখানটায় বসে ছিল সেখানটা শূন্য—সমস্ত ভেলাটাই শূন্য—শুধুই শ্ৰীমন্ত-আর কেউ নেই। মুহূর্তে শ্ৰীমন্তের হৃদয় থেকে একটা তপ্ত আগুনের ঝলক উঠে তার সমস্ত শিরায় শিরায় ছড়িয়ে গেল। শ্ৰীমন্তের হাত থেকে আলের দড়ি খসে পড়ল। মন্ত্রমুগ্ধের মতাে উঠে দাড়িয়ে সংজ্ঞালুপ্ত চোখ দুটো দিয়ে প্রসাদ যেখানটায় বসে ছিল সেখানটায় অর্থহীন দৃষ্টিতে চেয়ে রইল। মর্মভেদী চীৎকার করে একবার খালি “প্রসাদ” বলে ডেকে ভেলার উপরে পড়ে গেল। উত্তরে লক্ষ ঊর্মিবালার চাদের কিরণে চিকমিক করে লক্ষ নিষ্ঠুরা তরুণীর মতাে ভেলার আশে পাশে প্রতিহত হয়ে খিল খিল করে হাসতে লাগল আর কৌতুক করে’ ডাকতে লাগল—“প্রসাদ প্রসাদ ?” সুরেশচন্দ্র চক্রবর্তী।