পাতা:সবুজ পত্র (পঞ্চম বর্ষ) - প্রমথ চৌধুরী.pdf/২১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সবুজ পত্র শ্রাবণ, ১৩৫ চর্চা থেকে আমরা ঐহিক এবং পারত্রিক নানারূপ ফললাভের প্রত্যাশা রাখি। আপনারা সকলেই জানেন যে, সংস্কৃত সাহিত্যে “মাল্য চন্দন বনিতা” এ তিন একসঙ্গেই যায়, এবং ও তিনই ছিল এক পৰ্যায়ভুক্ত। কিন্তু আমাদের কাছে মাল্যচনের সামিল, বনিতাও নয়, কবিতাও নয়। কাজেই আমাদের চোখে সেকালের নাগরিক সমাজের রীতিনীতি অবশ্য দৃষ্টিকটু ঠেকে। কেননা আমাদের চোখের পিছনে আছে আমাদের মন, এবং আমাদের মনের পিছনে আছে আমাদের বর্তমান সামাজিক বুদ্ধি। এই কারণেই প্রাচীন সমাজের প্রতি সুবিচার করতে হলে, সে সমাজকে ঐতিহাসিকের চোখ দিয়ে দেখা কর্তব্য। তাই আমি উদাসীন গ্রন্থকীট হিসেবে নাগরিকদের উক্তরূপ সাহিত্যচর্চার ফলাফল একটুখানি আলােচনা করে দেখতে চাই। বলা বাহুল্য ঐতিহাসিক হতে হলে প্রথমত বর্তমানের প্রতি উদাসীন হওয়া চাই, দ্বিতীয়ত প্রাচীন গ্রন্থের কীট হওয়া চাই। আরও অনেক হওয়া চাই,—কিন্তু ও দুটি না হলে নয়। যে সমাজে কাব্যচর্চা হচ্ছে বিলাসের একটি অঙ্গ, সে সমাজ যে সভ্য-এই হচ্ছে আমার প্রথম বক্তব্য। যা মনের বস্তু তা উপভােগ করবার ক্ষমতা বর্বর জাতির মধ্যে নেই, ভােগ অর্থে তারা বোঝে কেবলমাত্র দৈহিক প্রবৃত্তির চরিতার্থতা। ক্ষুৎপিপাসা নিবৃত্তি পশুরাও করে, এবং তা ছাড়া আর কিছু করে না। অপরপক্ষে যে সমাজের আয়েসীর দলও কাব্যকলার আদর করে, সে সমাজ সভ্যতার অনেক সিড়ি ভেঙ্গেছে। সভ্যতা জিনিসটে কি, এ প্রশ্ন কেউ জিজ্ঞাসা করলে দু' কথায় তার উত্তর দেওয়া শক্ত। কেননা যুগভেদে ও দেশ ভেদে পৃথিবীতে সভ্যতা নানা-মুর্তি ধারণ করে দেখা দিয়েছে, এবং