পাতা:সবুজ পত্র (পঞ্চম বর্ষ) - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৩১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Nys সবুজ পত্ৰ vtu, Yor6. অজিত আর ভজহরির মধ্যে কোন সূত্রে বন্ধুত্ব হ’ল, তার ইতিহাস একটুখানি বলে রাখা আবশ্যক। আন্তরিক প্রীতির যোগই এ বন্ধুত্বের ভিত্তি নয়। বর-কণের পরস্পরের হৃদয়ের গ্ৰীতি বা প্ৰাণের আকর্ষণ ব্যতিরেকে, একমাত্র অভিভাবকদের মরজিতেই যেমন তাদের উদ্বাহ বন্ধনে আবদ্ধ করা হয়, তেমনিতর অজিত ও ভজহরির মধ্যে যে বন্ধুত্বের যোগ,-ও ব্যাপারটি অভিভাবকদের ইচ্ছা ক্ৰমেই সম্পন্ন হয়েছিল। অজিত যখন ছ’সাত বছরের বালক, তখন দেশে একটি নতুন ব্যামো দেখা দিয়েছিল। সেকালে পল্লীর পিতামাতার অন্তরে এই একটি ংস্কার ছিল, যে ধৰ্ম্ম-সম্বন্ধ পাতিয়ে পুত্ৰ কন্যাদের ধৰ্ম্ম-সূত্রে যুক্ত না করলে, ধৰ্ম্মরাজের চর বা অনুচর বর্গের হাত থেকে আর পরিত্ৰাণ নেই। সে কারণ, নতুন ব্যামোটি যখন দেখা দিল, তখন চিকিৎসকের শরণাগত হবার আগ্ৰহ পল্লীবাসীদের ভিতর তেমন প্ৰকাশ পেলে না ; বরং ধৰ্ম্ম-রাজের অনুচরবৃন্দকে একটি বন্ধনের অজুহাত দেখাবার জন্য ধৰ্ম্মকে স্বাক্ষী-রেখে “সই” পাতাবার বা বন্ধুত্ব স্থাপন করবার হুজুগটা পল্লীতে বড় বেশি বেড়ে গেল । অজিতের ঠাকুরমা ছিলেন সেকালের গিন্নি। এমন কোন কুসংস্কার দেশে ছিল না, যার উপর তঁর আন্তরিক শ্রদ্ধা না ছিল, দেশে এমন কোন আজগুবি কথা উঠতি না, যার উপর তিনি বিশ্বাস স্থাপন না করতেন। আকাশের অনন্তব্যাপী যে নীলিমা, ওটা একদিন একটা শামিয়ানার মতো মানুষের ঠিক মাথার উপরেই ছিল, হাত বাড়িয়ে বেশ ছোয়াও চলত। তারপর কোন আছ্যিকালের এক বুড়ি কোন রাজার বাড়ীর উঠোন বঁট দিতে দিতে হাতের বঁাটাখানি তুলে যেমনি আকাশের গায়ে একটি বাড়ি মারলে, অমনি ক্ষোভে অভিমানে