পাতা:সবুজ পত্র (পঞ্চম বর্ষ) - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৩৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SovR সবুজ পত্ৰ । আখিন, ১৩২৫ সকল শিক্ষার মত, বিদেশীভাষা শিক্ষাও কাল ও পাত্র সাপেক্ষ । শৈশব এ শিক্ষার উপযুক্ত কাল নয়, বালক এ শিক্ষার উপযুক্ত পাত্ৰ নয়। শিশুর দেহের পক্ষে মাতৃদুগ্ধ যা, বালকের মনের পক্ষে মাতৃভাষাও ভাই। অর্থাৎ মাতৃভাষার সাহায্য বিনা বালকের মন গড়ে ওঠে না। ছেলেরা যে ভাষা অষ্টপ্রহর শোনে, আর যে ভাষায় অষ্টপ্রহর কথা কয়, সেই ভাষার সাহায্যেই তারা পরের কথা বুঝতে ও নিজের কথা বোঝাতে শেখে। ছেলের মন ও ছেলের ভাষা, ও দুই হচ্ছে একই জিনিসের এ-পিঠ আর ও-পিঠ; সুতরাং এ দুই এক সঙ্গে যেমন বেড়ে ওঠে তেমনি গড়ে ওঠে। তারপর আত্মপ্ৰকাশ করবার চেষ্টাতেই মানবসন্তানের ভাষার উপর যথার্থ অধিকার জন্মে এবং সেই সঙ্গে মনের ” শক্তি ও বৃদ্ধি পায়। শিশুর দেহের সঙ্গে তার মন এবং তার মনের সঙ্গে তার স্বভাষী-জ্ঞান যে এক রকম স্বাভাবিক নিয়মে গড়ে ওঠে, এ কথা বললেও অত্যুক্তি হয় না। অপরপক্ষে বিদেশী ভাষা, সজ্ঞানে শিখতে হয়; সুতরাং তা শেখাবার জন্য সেই মন চাই-যে-মন বালকের নেই। বারো বৎসর বয়েসের পুর্বে বিদেশী ভাষা শেখাবার চেষ্টাটা ছেলেদের পক্ষে যে, শুধু কষ্টকর ও ব্যৰ্থ, তাই নয়-তার মনের পক্ষেও যথেষ্ট ক্ষতিকর । মন্ত মাংস সেবন ছোট ছেলের দেহের পক্ষে যতটা উপকারী, একটি বিদেশী ভাষার চর্চা ছোট ছেলের মনের পক্ষে তার চাইতে বেশি উপকারী নয়। আমরা ছোট ছেলেদের তা গিলিয়ে দিতে পারি। কিন্তু তা জীৰ্ণ করবার শক্তি তাদের নেই। ফলে অল্প বয়েসে ইংরাজি শিখতে গিয়ে, আমাদের ছেলেরা ইংরাজিও ভাল করে আয়ত্ব করতে পারে না এবং লাভের মধ্যে শুধু মানসিক মন্দাগ্নিগ্ৰস্তু হয়ে পড়ে। যে মন ছেলেবেলায় বিদেশী ভাষার চাপে জড় হয়ে