পাতা:সবুজ পত্র (পঞ্চম বর্ষ) - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

s, এম গং বিপ্লবকে বহন করিয়া আসেন। লোকে তাঁহাকে শত্রু বলিয়া জ্ঞান করে। লােকে মনে করে বাঁধা মন্ত্র যিনি কানে দেন, তিনিই গুরু। কিন্তু মানবের গুরু রুদ্ধদ্বার ভাঙ্গিয়া, বিপ্লবের বাহনে আসেন—তিনি সেই কথা বলিতে আসেন যাহা আমরা সহজে মানিব না, শুনিব না। গুরু আসা গুরুতর ব্যাপার। বিধাতা যখন আমাদের প্রার্থনা শশানেন “যদ্ভদ্রং তন্নয়াসুব” যা ভদ্র তাই দাও—তখন তিনি দুই হাতে মশাল লইয়া আসেন–বড় ভয়ানক সে কাল ! যিনি বলিয়াছেন “যুগে যুগে সম্ভবামি” তিনি যখন আসেন, তখন দেশে দেশে হাহাকার পড়িয়া যায়, সেদিন দারুণ দুঃখের দিন! তাহারও অপমানের দুঃখের শেষ নাই। যখন আরামে আছি, তখন যে আরাম ভাঙ্গিতে আসে তাহাকে লাঞ্ছিত হইতেই হয়। প্রাণ নিজেকে আঁকড়াইয়া থাকে-মমির সঙ্গে যে বীজ ছিল, ৩৪ হাজার বৎসর পরেও অনুকুল অবস্থার মধ্যে পড়িবামাত্র তাহা সঞ্জীবিত হইয়া উঠিল। মানুষের ভিতর যে প্রাণশক্তি আছে তাহাও সহজে মরিতে চায় না। বাধা নিয়মের দাসত্ব করিতে করিতে, বিশ্বের সহিত অব্যবহিত ভাবে আনন্দের যে যােগ, তাহা পাইবার ব্যাকুলতা সমাজের অন্তরে মরিয়া যায়—তবুও তাহার মধ্যে এক একজন থাকিয়া যায়, প্রত্যক্ষ ভাবে নিজের প্রাণকে সকলের সঙ্গে যােগযুক্ত করিবার ব্যথা যাহাদের কিছুতে মরে না। পঞ্চক সেই ব্যক্তি—যাহার প্রাণ মরিয়াও মরিতে চাহে না, চতুর্দিক হইতে পিষ্ট হইয়াও যে বাঁচিয়া থাকে। “অচলায়তন” তাহাকে ধরিয়া রাখিতে পারে না—মন্ত্র আওড়াইতে গিয়া তাহার মুখ হইতে গান বাহির হইয়া পড়ে।