পাতা:সবুজ পত্র (পঞ্চম বর্ষ) - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

এম ব, এখন সংখ্যা এ সাহিত্য আমি পূর্বে কখনও শ্রদ্ধাভরে পড়ি নি,কেননা জাতকমালার সঙ্গে যৎসামান্য পরিচয় থেকে আমার মনে একটা ধারণা জন্মেছিল যে ও হচ্ছে ছোটছেলের সাহিত্য। কিন্তু সেই জাতকমাল। সে দিন আবার পড়তে গিয়ে তার ভিতর এক মহাবস্তুর সাক্ষাৎ লাভ করেছি, সে হচ্ছে মানুষের আত্মনির্ভরতার মহত্ব। বৌদ্ধযুগ যে শক্তির যুগ, তার কারণ বৌদ্ধ-ধৰ্ম্ম মানুষকে তার আত্মশক্তির উপর সম্পূর্ণ নির্ভর করতে শিখিয়েছিল। শাক্যসিংহ যে, মানুষের হাতেগড়া মানুষের পায়ের বেড়ি ভেঙ্গে দিয়েছিলেন শুধু তাই নয়, তাদের হাতের কড়া ও খুলে দিয়েছিলেন-তার ধর্মপুত্রের দেবতার কাছেও হাতজোড় কতেন না। তাদের চিরনির্ভর হুল ছিল, নিজের ধর্মবল ও নিজের কৰ্ম্মবল। তুমি ভাবছ আমি আজ কি একটা খেয়ালের মাথায় বৌদ্ধদের আকাশে তুলে দিচ্ছি। এ সব যে আমার কল্পনা নয় তার প্রমাণ স্বরূপ তােমাকে সংক্ষেপে সুপারগ জাতকের গল্পটি বলছি। পুরাকালে ভারতবর্ষে একটি মহাসত্ব পরমনিপুমতি নৌ-সারথি ছিলেন। তাঁর যাত্রাসিদ্ধির গুণে লােকসমাজে তিনি সুপারগ নামে প্রসিদ্ধ হন। কোনও এক সময়ে সুবর্ণভূমির বণিকগণ সাগরপারে যাবার সংকল্প করে সুপারগের দ্বারস্থ হন। বার্ধক্যবশত তখন তার দেহ রাশিথিল হয়ে পড়েছিল, দৃষ্টিক্ষীণ হয়ে এসেছিল, স্মৃতিশক্তির হ্রাস হয়েছিল, বলে প্রথমে তিনি মহাসমুদ্র যাত্রা করতে স্বীকৃত হন নি; নিজের জীবনের ভয়ে নয়, যাত্রীর বিপদ আশঙ্কা করে। বণিক- গণের নির্বাতিশয্য অতিক্রম করতে না পেরে অবশেষে তিনি ভরুকচ্ছ হতে মহাসমুদ্র যাত্রা করলেন। দিনটা ভালয় ভালয় কেটে গেল, সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে উঠল প্রচণ্ড ঝড়। সে ঝড়ের বর্ণনা এত সুন্দর