পাতা:সবুজ পত্র (পঞ্চম বর্ষ) - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ty স পত্র জ্যৈষ্ঠ, ১৩২৫ স্বাভাবিক; বরং মতের প্রকার ভেদ কিছু কম হইলেই বিস্ময়ের কারণ হইত। একে তো শিক্ষা জিনিসটী, তা তার প্রণালী সে রকমই হােক, অনেকটাই অজানা মাটিতে বীজ ছড়াইয়া ফসলের আশায় বসিয়া থাকার মত। কোন জমিতে যে কেমন বীজে কোন ফল ফলিবে তাহ পূর্ব হইতে নিশ্চয় জানিবার উপায় নাই। যে পথে চলিয়া বৈদ্য চিকিৎসক হয় বসিয়া নিন্দুক লােকে রটায়, সেই ঠেকিয়া শেখার পথটা এখানে অনেকটা সঙ্কীর্ণ, কেননা এক জমিতে দুইবার বীজ বুনিবার উপায় নাই। এবং শিক্ষার তত্ত্ব ও শিষ্যের মনস্তত্ব সম্বন্ধে প্রচুর পুথি ও পাণ্ডিত্য থাকা স্বত্ত্বেও, যে-মন লইয়া শিক্ষককে কাজ করিতে হয়, কোনও বৈজ্ঞানিক আচার্যের যন্ত্রের মধ্যে তাহ ধরা দেয় না। সমস্ত মনস্তত্ত্বই সাধারণ মনের তত্ত্ব, অর্থাৎ যে মন কল্পনায় আছে কিন্তু বস্তুগত্যা নাই। আর শিক্ষকের কারবার হইল বিশেষ মনকে লইয়া, যাহা এই নিয়মের জগতে প্রায় খাপছাড়া অনিয়ম, যাহার বিকাশ ও বিকারের নীতি দর্শন শাস্ত্রের ভাষায় গুহাস্থিত ও দুয়ে। সেই জন্য দেখা যায় অতি-অবৈজ্ঞানিক সেকেলে ধরণের শিক্ষাপ্রণালীর মধ্য দিয়াও মানুষের মন বিকশিত হইয়া ওঠে, আবার অত্যন্ত টাকা বৈজ্ঞানিক প্রণালী ও ইহার ‘সনাতন জড়তায়’ ঠেকিয়া ব্যর্থ হইয়া যায়। কালেই কোনও প্রণালীরিই ফলটা প্রবর্তকের আশানুযায়ী বা নিন্দুকের ভবিষ্যৎ বাণীর অনুরূপ পুরাপুরি রকমে ফলে না। সুতরাং শিক্ষার প্রণালী লইয়া তর্কে কোনও পক্ষেই একবারে হতাশ হইবার কারণ নাই। কেননা ফলের কষ্টিপাথরে প্রণালীকে কষিয়া এমন কিছু দেখা যায় না, যাহাতে তার্কিককে নিরুত্তর করিতে পারা যায়।