পাতা:সময় অসময় নিঃসময় - তপোধীর ভট্টাচার্য.pdf/৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পর্যন্ত কাউকে রেয়াত করবে না। একুশে ফেব্রুয়ারি ও উনিশে মে-র চেতনা থেকে যদি উত্তরায়ণমনস্কতা বিচ্ছুরিত না হয়, ছাই ও লাভার স্কুপে তৈরি হবে নতুন-এক পম্পাই নগরের দুঃস্মৃতি।

 না, পুরোপুরি ঠিক বলা হল না। কেননা একুশ শতক হলো স্মৃতিহীনতার শতক। এককেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থার দুর্নিবার দাপটে সব ধরনের সত্য উৎপাদিত হচ্ছে যন্ত্রদানবে। আমরা এখন তবু যাদুঘরে গিয়ে আদিম মহাসরীসৃপদের প্রস্তরীভূত কঙ্কাল দেখি, অদূর ভবিষ্যতে কম্পিউটার দিয়ে পুনর্নির্মিত বাঙালি সংস্কৃতির অশ্মীভূত রূপ দেখার জন্যে আগ্রহী দর্শক পাওয়া যাবে না। এ কোনো দুঃস্বপ্নের অতিকথন নয়, এ হল আত্মবিস্মৃত বাঙালির অনিবার্য ভবিতব্য। সম্ভাব্য অমরতার সোনার হরিণ বা সাময়িক লাভ-লোকসানের হিসেব যাদের অবক্ষয়ী আধুনিকতার প্রতি সমর্পিত করছিল, তাদের পথ ধরে চলতে চলতে পরবর্তী প্রজন্ম বিশ্বায়নের মাদকে ঝুঁদ হয়ে রয়েছে। বাঙালিত্ব এদের কারো অ্যাজেণ্ডায় ছিল না। আত্ম-অবলুপ্তির ঘনায়মান আশঙ্কার মুখখামুখি হয়েও তাই এরা নির্বিকার, তাদের প্রতিবেদনে শুধু ধ্বংসগোধূলির ম্লানায়মান ছায়া।

 কোথায় একুশে, কোথায় উনিশে আজ? নিভন্ত চুল্লিতে আগুন ফলাবে কোন হাঁসজারু-বকচ্ছপদের ভিড়! এই প্রশ্নের মুখোমুখি আজ সহস্রাব্দের ভ্রামণিক সত্তা, নির্বাক বিষয় বিধুর।

 নিভন্ত এই চুল্লিতে সই একটু আগুন দে!

৩৬