পাতা:সমাজ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৪
সমাজ

উন্নতি মনে করিয়া আমরা ইংরাজি ফেশানে করতালি দিতেছি। উন্নতির চাকচিক্য লাভ করিয়াছি কিন্তু উন্নতিকে ধারণ করিবার, পোষণ করিবার ও রক্ষা করিবার বিপুল বল কই লাভ করিতেছি? আমাদের হৃদয়ের মধ্যে চাহিয়া দেখ, সেখানে সেই জীর্ণতা, দুর্ব্বলতা, অম্পূর্ণতা, ক্ষুদ্রতা, অসত্য অভিমান, অবিশ্বাস, ভয়। সেখানে চপলতা, লঘুতা, আলস্য, বিলাস। দৃঢ়তা নাই, উদ্যম নাই, কারণ সকলেই মনে করিতেছেন, সিদ্ধি হইয়াছে, সাধনার আবশ্যক নাই। কিন্তু যে সিদ্ধি সাধনা ব্যতীত হইয়াছে তাহাকে কেহ বিশ্বাস করিয়ো না। তাহাকে তোমার বলিয়া মনে করিতেছ কিন্তু সে কখনই তোমার নহে। আমরা উপার্জ্জন করিতে পারি, কিন্তু লাভ করিতে পারি না। আমরা জগতের সমস্ত জিনিষকে যতক্ষণ না আমার মধ্যে ফেলিয়া আমার করিয়া লইতে পারি, ততক্ষণ আমরা কিছুই পাই না। ঘাড়ের উপরে আসিয়া পড়িলেই তাহাকে পাওয়া বলে না। আমাদের চক্ষের স্নায়ু সূর্য্যকিরণকে আমাদের উপযোগী আলো আকারে গড়িয়া লয়, তা না হইলে আমরা অন্ধ; আমাদের অন্ধ চক্ষুর উপরে সহস্র সূর্যকিরণ পড়িলেও কোনো ফল নাই। আমাদের হৃদয়ের সেই স্নায়ু কোথায়? এ পক্ষাঘাতের আরোগ্য কিসে হইবে? আমরা সাধনা কেন করি না? সিদ্ধির জন্যে আমাদের মাথাব্যথা নাই বলিয়া। সেই মাথাব্যথাটা গোড়ায় চাই।

 অর্থাৎ বাতিকের আবশ্যক। আমাদের শ্লেষ্মাপ্রধান ধাত, আমাদের বাতিকটা আদবেই নাই। আমরা ভারি ভদ্র, ভারি বুদ্ধিমান, কোনো বিষয়ে পাগ‍্লামি নাই। আমরা পাশ করিব, রোজকার করিব, ও তামাক খাইব। আমরা এগোইব না, অনুসরণ করিব; কাজ করিব না, পরামর্শ দিব; দাঙ্গাহাঙ্গামাতে নাই, কিন্তু মকদ্দমা মাম্‌লা ও দলাদলিতে আছি। অর্থাৎ হাঙ্গামের অপেক্ষা হুজ্জৎটা আমাদের