পাতা:সমাজ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২০
সমাজ

প্রবেশ করিয়াছে। তাহাদের আগমন যে-পর্য্যন্ত না সফল হইবে, জগৎ-যজ্ঞের নিমন্ত্রণে তাহাদের সঙ্গে যে-পর্য্যন্ত না যাত্রা করিতে পারিব, সে-পর্য্যন্ত তাহারা আমাদিগকে পীড়া দিবে, তাহারা আমাদিগকে আরামে নিদ্রা যাইতে দিবে না।

 ইংরেজের আহ্বান যে-পর্য্যন্ত আমরা গ্রহণ না করিব, অহাদের সঙ্গে মিলন যে-পর্য্যন্ত না সার্থক হইবে, সে-পর্য্যন্ত তাহাদিগকে বলপূর্ব্বক বিদায় করিব, এমন শক্তি আমাদের নাই। যে ভারতবর্ষ অতীতে অঙ্কুরিত হইয়া ভবিষ্যতের অভিমুখে উদ্ভিন্ন হইয়া উঠিতেছে, ইংরেজ সেই ভারতের জন্য প্রেরিত হইয়া আসিয়াছে। সেই ভারতবর্ষ সমস্ত মানুষের ভারতবর্ষ— আমরা সেই ভারতবর্ষ হইতে অসময়ে ইংরেজকে দুর কবিব, আমাদের এমন কি অধিকার আছে? বৃহৎ ভারতবর্ষের আমরা কে? এ-কি আমাদেরই ভারতবর্ষ? সেই আমরা কাহারা? সে কি বাঙালী, না মারাঠী, না পাঞ্জাবী; হিন্দু না মুসলমান? একদিন যাহারা সম্পূর্ণ সত্যের সহিত বলিতে পারিবে, আমরাই ভারতবর্ষ, আমরাই ভারতবাসী—সেই অখণ্ড প্রকাণ্ড “আমরার” মধ্যে যে-কেহই মিলিত হউক্, তাহার মধ্যে হিন্দু মুসলমান ইংরেজ অথবা আরও যে-কেহ আসিয়াই এক হউক্ না— তাহারাই হুকুম করিবার অধিকার পাইবে এখানে কে থাকিবে আর কে না থাকিবে।

 ইংরেজের সঙ্গে আমাদের মিলন সার্থক করিতে হইবে। মহাভারতবর্ষ গঠন ব্যাপারে এই ভার আজ আমাদের উপরে পড়িয়াছে। বিমুখ হইব, বিচ্ছিন্ন হইব, কিছুই গ্রহণ করিব না, একথা বলিয়া আমরা কালের বিধানকে ঠেকাইতে পারিব না, ভারতের ইতিহাসকে দরিদ্র ও বঞ্চিত করিতে পারিব না।

 অধুনাতন কালে দেশের মধ্যে যাঁহারা সকলের চেয়ে বড় মনীষী তাঁহারা পশ্চিমের সঙ্গে পূর্ব্বকে মিলাইয়া লইবার কাজেই জীবন-যাপন