পাতা:সমালোচনা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
এক-চোখো সংস্কার।
১৪৭

উপযোগী; কিন্তু সে অবস্থা অতীত হইলেও অনেক পিতা মাতা তাহাদিগকে শাসন করেন, তাহাদিগকে বলপূর্ব্বক পালন করেন, তাহাদিগকে যথোপযোগী স্বাধীনতা দেন না। সন্তানের বর্ষে বর্ষে পরিবর্ত্তন আছে, অথচ পিতা মাতার কর্ত্তব্যের পরিবর্ত্তন নাই। ইহার ফল হয় এই যে, একদিন সহসা তাঁহারা দেখিলেন– সন্তান তাঁহাদের একটি আদেশ শুনিল না, মাঝে মাঝে এক একটা বিষয়ে তাঁহাদের অবাধ্যতা করিতে লাগিল। তাঁহাদের কখন এরূপ অভ্যাস ছিল না; বরাবর তাঁহাদের আদেশ পালিত হইয়া আসিতেছে, আজ সহসা তাহার অন্যথা দেখিয়া তাঁহাদের গায়ে সহ্য হয় না। উভয় পক্ষে একটা সংঘর্ষ বাধিয়া যায়। ইহাকেই বলে বিপ্লব। অবশেষে একে একে সে পিতা মাতার একটি একটি শাসন হইতে আপনাকে মুক্ত করিতে থাকে, তাহার স্বাধীনতার সীমা পদে পদে বৃদ্ধি করিতে থাকে ও অবশেষে স্বাতন্ত্র্য লাভ করে– ইহাকেই বলে সংস্কার। বৃদ্ধ লোকেরা আক্ষেপ করিতে থাকেন যে, সন্তানদের অবনতি হইল; স্বাধীনতাই লাভ করুক, আর আত্মনির্ভরই শিখুক, আর আলস্যই পরিহার করুক, যখন গুরুজনের অবাধ্য হইল তখন আর তাহাদের শ্রেয়ঃ কোথায়? অবাধ্য না হইলেই ভাল ছিল সন্দেহ নাই, কিন্তু সংসারে যদি কোন মঙ্গল না যুঝিয়া না পাওয়া যায়, সকলি যদি কাড়িয়া লইতে হয়, কিছুই যদি চাহিয়া না পাওয়া যায়, তাহা হইলে অবাধ্য না হইয়া আর গতি কোথায়?

 উপরের কথাটা আর একটু বিস্তৃত করিয়া বলা আবশ্যক। পৃথিবীতে কিছুই সর্ব্বতোভাবে পাওয়া যায় না। সাধারণতঃ বলিতে