পাতা:সমালোচনা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
অনাবশ্যক

প্রত্যক্ষবাদী, যে, বর্ত্তমানের গায়ের উপর অতীতের একটা স্পষ্ট চিহ্ন থাকা চাই, তবেই তাহার সহিত আমাদের ভালরূপ আদান প্রদান চলিতে পারে। যাহার অতীত জীবন বহুবিধ কার্য্যভার বহন করিয়া ধনবান বণিকের মত সময়ের পথ দিয়া চলিয়া গিয়াছিল, সে নিশ্চয়ই পথ চলিতে চলিতে একটা-না-একটা টুকরা ফেলিতে ফেলিতে গিয়াছিল, সেই গুলি ধরিয়া ধরিয়া অনায়াসেই সে তাহার অতীতের পথ খুঁজিয়া লইতে পারে। আর আমাদের মত যাহার অলস অতীত রিক্তহস্তে পথ চলিতেছিল, সে আর কি চিহ্ন রাখিয়া যাইবে! সুতরাং তাহাকে আর খুঁজিয়া পাইবার সম্ভাবনা নাই, সে একেবার হারাইয়া গেল!

 ইতিহাস সম্বন্ধেও এইরূপ বলা যায়। বর্ত্তমানের গায়ে অতীতকালের একটা নাম সই থাকা নিতান্তই আবশ্যক। কালিদাস যে এক সময়ে বর্তমান ছিলেন, তাহা আমি অস্বীকার করি না, কিন্তু আজি যদি আমি দৈবাৎ তাঁহার স্বহস্তে-লিখিত মেঘদূত পুঁথিখানি পাই, তবে তাঁহার অস্তিত্ব আমার পক্ষে কি রূপ জ্বাজ্জল্যমান হইয়া উঠে! আমরা কল্পনায় যেন তাঁহার স্পর্শ পর্য্যন্ত অনুভব করিতে পারি। ইহা হইতে তীর্থযাত্রার একটি প্রধান ফল অনুমান করা যায়। আমি একজন বুদ্ধের ভক্ত। বুদ্ধের অস্তিত্বের বিষয়ে আমার কোন সন্দেহ নাই। কিন্তু যখন আমি সেই তীর্থে যাই, যেখানে বুদ্ধের দন্ত রক্ষিত আছে, সেই শিলা দেখি যাহার উপর বুদ্ধের পদচিহ্ন অঙ্কিত আছে, তখন আমি বুদ্ধকে কতখানি প্রাপ্ত হই! যখন দেখি, ফুটন্ত, ছুটন্ত বর্ত্তমান স্রোতের উপর পুরাতন কালের একটি প্রাচীন