পাতা:সমূহ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১৬
সমূহ।

নিয়ত করা হইয়াছে। ক্রমে এখন সেই উৎসাহ ঘরে আগুন লাগালে এবং মানুষ মারাতে গিয়া পৌঁছিয়াছে।

 দুঃখের বিষয় এই যে, এইরূপ উৎপাতকে আমাদের দেশের অনেক ভদ্রলােক আজও অধ্যায় বলিয়া মনে করিতেছেন না—তাঁহারা স্থির করিয়াছেন দেশের হিতসাধনের উপলক্ষে এরূপ উপদ্রব করা যাইতে পারে।

 ইহাদের নিকট ন্যায়ধর্মের দােহাই পাড়া মিথ্যা;—ইহারা বলে মাতৃভূমির মঙ্গলের জন্য যাহা করা যাইবে তাহা অধৰ্ম হইতে পারে না। কিন্তু অধর্মের দ্বারা যে মাতৃভূমির মঙ্গল কখনই হইবে না সে কথা বিমুখ বুদ্ধির কাছেও বারবার বলিতে হইবে।

 জিজ্ঞাসা করি, বাজারে আগুন লাগাইয়া অথবা অনিচ্ছুক লােকের মাথা ভাঙিয়া যদি আমরা বিলাতী কাপড় ছাড়াইয়া একদল লােককে দেশী কাপড় ধরাই তবে বাহিরে মাত্র দেশী কাপড় পরাইয়া ইহাদের সমস্ত অন্তঃকরণকে কি স্বদেশীর বিরুদ্ধে চিরদিনের জন্য বিদ্রোহী করিয়া তুলি না? দেশের যে সম্প্রদায়ের লােক স্বদেশী প্রচাবের ব্রত লইয়াছেন তাঁহাদের প্রতি এই সকল লােকের বিদ্বেষকে কি চিরস্থায়ী করা হয় না?

 এইরূপ ঘটনাই কি ঘটিতেছে না? “যাহারা কখনো বিপদে আপদে সুখে দুঃখে আমাদিগকে স্নেহ করে নাই, আমাদিগকে যাহারা সামাজিক ব্যবহারে পশুর অপেক্ষা অধিক ঘৃণা করে তাহারা আজ কাপড় পরানো বা অন্য যে কোনাে উপলক্ষে আমাদের প্রতি জবরদস্তি প্রকাশ করিবে, ইহা আমরা সহ্য করিব না” দেশের নিম্নশ্রেণীর মুসলমান এবং নমশূদ্রের মধ্যে এইরূপ অসহিষ্ণুতা জাগিয়া উঠিয়াছে। ইহারা জোগ করিয়া, এমন কি, ক্ষতি স্বীকার করিয়াও বিলাতী সামগ্রী ব্যবহার করিতেছে।

 তাই বলিতেছি, বিলাতী দ্রব্য ব্যবহারই দেশের চরম অহিত নহে, গৃহবিচ্ছেদের মত এত বড় সহিত আর কিছু নাই। দেশের একপক্ষ