পাতা:সম্রাট্‌ ও সম্রাট্‌-মহিষীর ভারত পরিদর্শন - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভারত-পরিদর্শন G ধীনতায় জীৰ্ণ ভারতবর্ষ, এই অভিনবসম্বন্ধে এক নব জীবনের স্পন্দন অনুভব করিল। এবং রাজা প্ৰজার সম্বন্ধের প্রাচীন আদর্শ যে ফিরিয়া আসিবে, তাহা আশা করিল। যে দিন শত্ৰু-মিত্র ও ভিন্ন ভিন্ন জাতি একত্ৰ হইয়া বড়লাট লিটনের দরবারে উপস্থিত হইল, সেদিন স্পষ্টই প্ৰতীয়মান হইল যে, রাজকীয় উদার উদ্দেশ্য সফল হইতে চলিয়াছে। ভারতের ইতিহাসে এই নবজাগরণ বিশেষরূপে উল্লেখযোগ্য । বিশালসাম্রাজ্যের হিতার্থ যুদ্ধের জন্য, ভারতীয় সৈন্যগণ আনন্দের সহিত সমুদ্র লঙ্ঘন করিতে প্ৰস্তুত হইল। জুবিলী উপলক্ষে, ভারতীয় নৃপতিবৃন্দ সাম্রাজ্যব্যাপী মহা আনন্দের অংশভাগী হইতে উৎফুল্লচিত্তে ইংলণ্ডে গমন করিলেন। তাহারা তঁহাদের সৈন্যের কতকাংশ সাম্রাজ্য রক্ষার জন্য নিয়োজিত করিলেন । পঞ্চবিংশ বৎসরের মধ্যে এই দেশে যে আভ্যন্তরীন শান্তি প্ৰতিষ্ঠিত হইল তাহা ভারতের ইতিহাসে সম্পূর্ণ অভিনব। কি শিক্ষা, কি চিকিৎসা, কি গমনাগমনে সুবিধা, কি দুৰ্ভিক্ষদমন, সকল বিষয়েই দেশে অভূতপূর্ব উন্নতি পরিলক্ষিত হইল। এই সব বিষয়ের সুখ সুবিধা জাতিনির্বিশেষে সকলেই সমানভাবে উপভোগ করিতে লাগিল। প্ৰাচীনকালে যে সর্বতোমুখী বিরাটু উন্নতি কল্পনার অতীত ছিল, ভারত গভৰ্ণমেণ্ট সাহসিকতার সহিত সমস্ত বিষয়ে সেই উন্নতির ভিত্তি-স্থাপন করিলেন। বাণিজ্য পূর্বাপেক্ষা শতগুণে বৃদ্ধি পাইল। সাম্রাজ্ঞী স্বয়ং ভারতবাসীদিগের সাহচৰ্য্য ভালবাসিতেন। কয়েকটি ভারতীয় নিত্যসহচরে পরিবৃত হইয়া তিনি ভারতবর্ষের প্রতি তদীয় কৰ্ত্তব্যের চিন্তা হৃদয়ে সর্বদা জাগ্ৰাৎ রাখিতেন। এইজন্য তিনি তাহদের রীতিনীতি ও ভাষা শিক্ষায় মনোনিবেশ করিয়াছিলেন। অবশেষে যখন তাহার দীর্ঘ ও গৌরবময় জীবনের অবসান হইল, তখন, ভারতবাসীরা তঁহার জন্য এরূপ অনন্যসাধারণ শোকপ্ৰকাশ করিয়াছিলেন যে, তাহা পৃথিবীর ইতিহাসে অতুলনীয়। ভারতবাসিগণের হৃদয়মন্দিরে তিনি মাতৃরূপে প্ৰতিষ্ঠা লাভ করিয়াছিলেন। বৰ্ত্তমান সম্রাটু যথার্থই বলিয়াছিলেন, “যদিও তিনি (মহারাণী ভিক্টোরিয়া) ভারতবর্ষে পদার্পণ করিয়া এদেশবাসী দিগকে দেখিবার সুযোগ পান নাই, তথাপি তিনি তাহার অপূর্ব সহানুভূতির বলে ভারতবাসী সকল শ্রেণীর লোকের মনোগতভােব বুঝিয়ে তাহদের প্রতি করুণাময়ী ছিলেন ।” ১৯০১ খৃঃ অব্দে ভারতসম্রাটু এডোয়ার্ড সিংহাসনাধিরোহণ করিলেন।