পাতা:সরীসৃপ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৫
মমতাদি

 ঘরে আর একটি জিনিষ ছিল—একটি বছর পাঁচেকের ছেলে। চৌকীতে শুধু মাদুরের ওপরে উপুড় হয়ে শুয়ে সে ঘুমিয়ে ছিল। মমতাদি ঘরে ঢুকেই ব্যস্ত হয়ে ছেলেটির গায়ে হাত দিল, তারপর গুটানো বিছানার ভেতর থেকে লেপ আর বালিস টেনে বার করল। সন্তর্পণে ছেলেটির মাথার তলে বালিশ দিয়ে লেপ দিয়ে গা ঢেকে দিল।

 বলল, কাল সারারাত পেটের ব্যথায় নিজেও ঘুমোয়নি, আমাকেও ঘুমোতে দেয়নি। উনি ত রাগ ক’রে—কই, তুমি লেবু খেলেনা?

 আমি একটা লেবু খেলাম। সে চুপ করে খাওয়া দেখে বলল, মুড়ি ছাড়া ঘরে কিছু নেই, দোকানের বিষও দেবনা, একটা লেবু খাওয়াতে তোমাকে ডেকে আনলাম!

 আমি বললাম, আর একটা লেবু খাব দিদি। সে হেসে লেবু দিল, বলল কৃতার্থ হলাম। সবাই যদি তোমার মত ভালবাসত!

 ঘরে আলো ও বাতাসের দীনতা ছিল। খানিক পরে সে আমায় বাইরে রোয়াকে মাদুর পেতে বসাল। কথা বলার সঙ্গে সংসারের কয়েকটা কাজও করে নিল। ঘর ঝাঁট দিল, কড়াই মাজল, জল তুলল, তারপর মসলা বাটতে বসল। হঠাৎ বলল, তুমি এবার বাড়ী যাও ভাই। তোমার খিদে পেয়েছে।


 কয়েক মিনিট পরে রাজা যেন রাজধানীতে প্রবেশ করলেন এমনি ভঙ্গিতে প্রায় চল্লিশ বছর বয়সের একটি লোক বাড়ী ঢুকল। গৃহ প্রবেশের রকম দেখেই আমি তাকে চিনলাম। মমতাদির স্বামী নগেন।

 যেমন রোগা তেমনি ঢেঙ্গা। এত লম্বা লোক কোন দিন আমার চোখে