পাতা:সাধনা (তৃতীয় বর্ষ, দ্বিতীয় ভাগ).djvu/২৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাধনা ৷ বারেই অসম্ভব তাহা তাহারা মনে করিত না । এমন ঘোরতর বিশ্বাসহীন সন্দিগ্ধপ্রকৃতি তাহারা ছিল না। স্থতরাং ভাণ্ডারে যাহা মজুত আছে, তহবিলে যাহা কুলাইয় উঠে কবিত্বের উৎসাহে তাহার অপেক্ষ অত্যন্ত অধিক কিছু স্বীকার করিয়া বসিতে পারিত না। আমাদের বাঙ্গলা দেশের চাদামামা বাঙ্গলাদেশের সহস্ৰ কুটার হইতে মুকণ্ঠের সহস্র নিমন্ত্রণ প্রাপ্ত হইয়া চুপিচুপি হাস্ত করিত ; ছাও বলিত না, নাও বলিত না ; এমন ভাব দেথাইত যেন কোন দিন, কাহাকেও কিছু সংবাদ না দিয়া, পূৰ্ব্বদিগন্তে যাত্রারম্ভ করিবার সময়, অমনি পথের মধ্যে, কৌতুকপ্রফুল্ল পরিপূর্ণ হাস্যমুখখানি লইয়া ঘরের কানাচে আসিয়া দাড়াইবে। আমরা পূৰ্ব্বেই বলিয়াছি এই ছড়াগুলিকে একটি আস্ত জগতের ভাঙ্গ টুকুর বলিয়া বোধ হয়। ইহাদের মধ্যে বিচিত্র বিশ্বত সুখ-দুঃখ শতধা বিক্ষিপ্ত হইয়া রহিয়াছে। যেমন পুরাতন পৃথিবীর প্রাচীন সমুদ্রতীরে কর্দমতটের উপর বিলুপ্ত বংশ সেকালের পার্থীদের পদচিহ্র পড়িয়া ছিল--অবশেষে কালক্রমে কঠিন চাপে সেই কর্দম পদচিহ্লরেখাসমেত পাথর হইয়া গিয়াছে—সে চিহ্ন আপনি পড়িয়াছিল এবং আপনি রহিয়া গেছে ; কেহ খোস্ত দিয়া খুদে নাই, কেহ বিশেষ যত্নে তুলিয়া রাখে নাই,— তেমনি এই ছড়াগুলির মধ্যে অনেক দিনের অনেক হাসিকান্ন আপনি আঙ্কিত হইয়াছে, ভাঙ্গাচোর ছন্দগুলির মধ্যে অনেক হৃদয়বেদনা সহজেই সংলগ্ন হইয়া রহিয়াছে। কতংগলের একটুকরা মানুষের মন কালসমুদ্রে ভাসিতে ভাসিতে এই বহুদূরবত্তা বর্তমানের তীরে আসিয়া উৎক্ষিপ্ত হইয়াছে ;—আমাদের মনের কাছে সংলগ্ন হইবামাত্র তাহার সমস্ত বিশ্বত বেদন জীবনের উত্তাপে লালিত হইয়া আবার অশ্ৰুরসে সজীব হইয়া উঠিতেছে। o, ". মেয়েলি ছড়া । § { {: “ও পারেতে কলো রং, বৃষ্টি পড়ে ঝম্ঝম, এ পারেতে লঙ্কাগাছটি রাঙা টুক্‌টুক্‌ করে। গুণবতী ভাই অামার, মন-কেমন করে ॥” “এ মাসটা থাক্, দিদি, কেঁদে ককিয়ে । , ও মাসেতে নিয়ে যাব পান্ধী সাজিয়ে ॥” । “হাড় হল ভাজ-ভাজা, মাস হল দড়ি । অায়রে আয় নদীর জলে ঝাপ দিয়ে পড়ি ॥” এই অন্তর্ব্যথা, এই রুদ্ধ সঞ্চিত অশ্রুজলোচ্ছাস কোন কালে কোন গোপন গৃহকোণ হইতে, কোন অজ্ঞাত অখ্যাত বিস্কৃত নববধুর কোমল হৃদয়খানি বিদীর্ণ করিয়া বাহির হইয়াছিল! এমন কত অসহ কষ্ট জগতে কোন চিহ্ল না রাখিয়া অদৃশু দীৰ্ঘনিঃশ্বাসের মত বায়ুস্রোতে বিলীন হইয়াছে। এটা কেমন করিয়া দৈবক্রমে একটি শ্লোকের মধ্যে আবদ্ধ হইয়া গিয়াছে ! ও পারেতে কালো রং ; বৃষ্টি পড়ে ঝম্‌ঝম্ ! এমন দিনে এমন অবস্থায় মন-কেমন না করিয়া থাকিতে পারে না ! চিরকালই এমনি হইয়া আসিতেছে! বহুপূৰ্ব্বে উজ্জয়িনী রাজসভার মহাকবি ও বলিয়া গিয়াছেন,— মেঘালোকে ভবতি সুখিনোহপ্যন্যথাবুক্তিচেতঃ ———কিং পুনর্দু রসংস্থে । কালিদাস যে কথাটি ঈষৎ দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলিয়া উল্লেখ করিয়াছেন মাত্র,এই ছড়ায় সেই কথাটা বুক ফাটিয়া কাদিয়া উঠিয়াছে— ‘ *গুণবতী ভাই আমার, মন-কেমন করে!” হাড় হল ভাজা ভাজা, মাস হল দড়ি। আয়রে আয় নদীর জলে কাপ দিয়ে পড়ি 1– 1.