পাতা:সাধনা (তৃতীয় বর্ষ, দ্বিতীয় ভাগ).djvu/২৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাধন । তখন ইংরাজের আইন ছিল না। অর্থাৎ দাম্পত্য অধিকারের পুনঃ প্রতিষ্ঠার ভার পাহারাওয়ালার হাতে ছিল না। সুতরাং আত্মীয়গণকে উদ্যোগী হইয়া সেই কাজটা যথাসাধ্য সহজে এবং সংক্ষেপে সাধন করিতে হইত। আমার ক্ষুদ্র বুদ্ধিতে বোধ হয় ঘরের বধুশাসনের জন্য পুলিসের আইনের চেয়ে সেই গার্হস্থ্য আইন, কনষ্টেবলের হ্রস্ব যষ্টির অপেক্ষ সহোদর ভ্রাতার হুড় কো ঠেঙ্গা ছিল ভাল। আজ আমরা স্ত্রীকে বাপের বাড়ি হইতে ফিরাইবার জন্ত আদালত করিতে শিখিয়াছি, কাল হয় ত মান ভাঙ্গাইবার জন্ত প্রেসিডেন্সি ম্যাজিষ্ট্রেটের নিকট দরখাস্ত দাখিল করিতে হইবে। কিন্তু হাল নিয়মেই হোঁকু আর সাবেক নিয়মেই হৌক, নিতান্ত পাশব বলের দ্বারা অসহায়া কন্যাকে অযোগ্যের সহিত যোজনা--এত বড় অস্বাভাবিক বৰ্ব্বর নৃশংসতা জগতে আর আছে কি না সন্দেহ। বাপ মায়ের অপরাধ সমাজ বিস্মৃত হইয়া আসে কিন্তু বুড়া বরটা তাহার চক্ষুশূল । সমাজ স্থতীব্র বিক্রপের দ্বারা তাহার উপরেই মনের সমস্ত আক্রোশ মিটাইতে থাকে। তালগাছ কাটম বোসের বাটম গৌরী এল ঝি। তোর কপালে বুড়োবর আমি করব কি ॥ টঙ্কা ভেঙ্গে শঙ্খা দিলাম কানে মদন কড়ি। বিয়ের বেলা দেখে এলুম বুড়ে চাপ দাড়ি ॥ চোখ খাওগো বাপ মা, চোখ খাওগো খুড়ো ! এমন বরকে বিয়ে দিয়েছিলে তামাকখেগো বুড়ো ॥ বুড়োর হু কে গেল ভেসে বুড়ো মরে কেশে। নেড়ে চেড়ে দেখি বুড়ো মরে রয়েচে । । ফেন গালবার সময় বুড়ে নেচে উঠেচে ॥ r মেয়েলি ছড়া। 8ఆరి বৃদ্ধের এমন লাঞ্ছনা আর কি হইতে পারে । এক্ষণে বঙ্গগুহের যিনি সম্রাট,– যিনি বয়সে ক্ষুদ্রতম অথচ প্রতাপে প্রবলতম সেই মহামহিম খোকা খুকু বা খুকুনের কথাটা বলা বাকি আছে। - * প্রাচীন ঋগ্বেদ ইন্দ্র চন্দ্র বরুণের স্তবগান উপলক্ষ্যে রচিত— আর, মাতৃহৃদয়ের যুগলদেবতা খোকা এবং পুটুর স্তব হইতে ছড়ার উৎপত্তি। প্রাচীনতা হিসাবে কোনটাই নূ্যন নহে। কারণ, ছড়ার পুরাতনত্ব ঐতিহাসিকে পুরাতনত্ব নহে, তাহা সহজেই পুরাতন । তাহা আপনার আদিম সরলতাগুণে মানবরচনার সর্বপ্রথম। সে এই উনবিংশ শতাব্দীর বাষ্পলেশশূন্ত তীব্র মধ্যাহ্ব-রৌদ্রের মধ্যেও মানব হৃদয়ের নবীন অরুণোদয়-রাগ রক্ষা করিয়া আছে। এই চির-পুরাতন নববেদের মধ্যে যে স্নেহগাথা, যে শিশুস্তৰগুলি রহিয়াছে তাহার বৈচিত্র্য, সৌন্দর্য্য এবং আনন্দ-উচ্ছাসের আর সীমা নাই। মুগ্ধহদয়া বন্দনাকারিণীগণ নবনৰ স্নেহের ছাচে ঢালিয়া এক খুকুদেবতার কত মূৰ্ত্তিই প্রতিষ্ঠা করিয়াছে, সে কখন পার্থী, কখন চাদ, কখন মাণিক, কখন ফুলের বন । ধনকে নিয়ে বনকে যাব, সেখানে খাব কি ; নিরলে বসিয়া চাদের মুখ নিরথি । ভালবাসার মত এমন স্বষ্টিছাড়া পদার্থ আর কিছুই নাই। সে আরম্ভকাল হইতে এই স্বষ্টির আদি অন্তে অভ্যন্তরে ব্যাপ্ত হইয়া রহিয়াছে তথাপি স্বষ্টির নিয়ম সমস্তই লঙ্ঘন করিতে চায়। সে যেন স্বাক্টর লৌহপিঞ্জরের মধ্যে আকাশের পার্থী। শত সহস্রবার প্রতিষেধ, প্রতিরোধ, প্রতিবাদ, প্রতিঘাত পাইয়াও তাহার এ বিশ্বাস কিছুতেই গেল না, যে, সে অনায়াসেই নিয়ম না মানিয়া চলিতে পারে! সে মনে মনে জানে, আমি উড়িতে পারি এই জন্তই সে