পাতা:সাধনা (তৃতীয় বর্ষ, প্রথম ভাগ).djvu/২১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

. B ৭৬ সাধনা। । কাশী হিন্দুর নিকট তদপেক্ষা অধিক পবিত্র। উহার প্রত্যেক f প্রস্তরখণ্ড পবিত্র। কাশীতে যাহার মৃত্যু হয়, কোনও মলিনত কোনও পাপই তাহাকে স্পর্শ করিতে পারে না। খৃষ্টিয়ান হউক, মুসলমান হউক, গোহত্যাই করুক, বা গোমাংসই আহার করুক, ঠু সে নিশ্চয়ই কৈলাসধামে—শিবলোকে গমন করে। অতএব দেই ! ব্যক্তি ভাগ্যবান জীবনের শেষ ভাগ যে কাশীতে কাটাইতে । পারে। দুই লক্ষেরও অধিক যাত্রী ভারতের সকল দিক্ হইতে এই | খানে আসিয়া উপস্থিত হয় । তাহদের মধ্যে অনেকে বৃদ্ধ ও মৃত । o কল্প। দুর্ভাগ্যবশতঃ যদি কাহারও কাশীপ্রাপ্তি না হয়, अख्ऊ | তাহার অন্তিম ভস্মরাশি কাশিধামে পরে পাঠান হয়। এই উদেশে পাঠান হয় যে, গঙ্গাপুত্রের। অন্ত্যেষ্টি মন্ত্র পাঠ করিয়া তাহার অন্তিম ভস্ম গঙ্গাদেবীকে সমর্পণ করিবে । হিন্দুরা বলে, “কাশী-পুণ্যধাম কাশী—কাশীকে ধ্যান করিলেই শান্তিতে মৃত্যু হয় । বাস্তবিকই এই নগরটি অসাধারণ । অন্যত্র, ধৰ্ম্মাচরণ, প্রকাশ জীবনের এক অংশমাত্র, কিন্তু কাশীতে ধৰ্ম্ম ছাড়া আর কিছুই দেখা যায় না । ধৰ্ম্ম এখানে সমস্ত গ্রাস করিয়া আছে--মানবজীবনের প্রত্যেক মুহূৰ্ত্ত পূর্ণ করিয়া আছে—নগরকে মন্দিরে মন্দিরে ছাইনী ফেলিয়াছে। p--هنيس উনবিংশতি সহস্রেরও অধিক মন্দির, এতদ্ব্যতীত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দেবালয় অসংখ্য। মূৰ্ত্তির সংখ্যা যদি ধর তো সে কাশীর জনসংখ্যার দ্বিগুণ। প্রায় পাচ লক্ষ হইবে। কাল সন্ধ্যায় ধর্ণ" পৌছিলাম, দিনের আলো তখনও ছিল, তাই বেড়াইতে বেড়াইতে নদীর ধার পর্য্যন্ত গেলাম। নগরের আঁক-বাক গলিসকল সর্ব নগ্ন মানবকুলের গতিবিধিতে পরিপূর্ণ। দেবালয়ের দ্বারের সঙ্গুণ লোকের বেশি ভাড়। গৌরবর্ণ ব্রাহ্মণের ঠেলাঠেলি করিয়া চলি য়াছে ; সন্ন্যাসীরা আসন করিা উপবিষ্ট—ভন্মমাখা নগৰ ভারতবর্ষে । স্থির দৃষ্টি-চারিদিকের চঞ্চল গতিবিধির মধ্যে প্রস্তরবৎ হলদে ফুলের হার, মালা, প্রস্তরের শিবলিঙ্গ প্রভৃতি নানাবিধ ধৰ্ম্মোপকরণে এখানকার দোকান সকল পরিপূর্ণ। ঘরের দেয়ালে, দ্বারের উপরিভাগে,কুলঙ্গির উপর,নানাপ্রকার কদাকার দেবমূৰ্ত্তি— কাহারও বা গজমুণ্ড–কাহারও বা গায়ে সাপ জড়ানো। স্থানে স্থানে কুপ—তাহা হইতে পচা ফুলের দুর্গন্ধ বাহির হইতেছে। সেই সকল কুপে দেবতার বাস—তাহার চারিদিকে লোকের অত্যন্ত ভীড়। প্রাচীরের গায়ে নীলরঙ্গে চিত্রিত হিন্দু দেবদেবীর পৌরাণিক কাহিনী। দেবদেবীর অশ্লীল মূৰ্ত্তিসকল মালার আকারে মন্দিরের চারিদিকে বেষ্টিত। এত দেবদেবীর মূৰ্ত্তি যে, বড় বড় মন্দিরেও যেন আর ধরে না-রাস্তার মধ্যে ছোট ছোট দেব-স্থানেও দেবতাদিগকে আশ্রয় লইতে হইয়াছে—তাহাতে লম্বোদর গণেশ অথবা ভীষণ মূৰ্ত্তি কালীদেবী অধিষ্ঠিত। মন্দির বেদীর উপর যে জুই ফুল থাকে তাহাতে গঙ্গাজলের ছিটা দেওয়া হয়। এই গঙ্গাজলে ভিজিয়া ভিজিয়া ফুলসকল পচিয় উঠে—তৎপরে গোবর ও এই পচ ফুলে মিশিয়া একপ্রকার কর্দম উৎপন্ন হয় । এই কৰ্দমের উপর দিয়া পিছলিয়া পিছলিয়া চলিতেছি।--আর দুর্গন্ধ ভোগ করিতেছি। এই মানব জনতার মধ্যে আবার বানরের লাফালাফি করিতেছে — খেলিতেছে—ঘরের ছাদে বসিয়া আছে ; এবং বন্ধন-মুক্ত গাভীসকল ड्रेडস্তত বিচরণ করিয়া ফুল খাইতেছে। প্রাচীন হিন্দু মহাকাব্যে অসংখ্য যুগযুগান্তের কথা, অসংখ্য দেবদেবীর কথা, অসংখ্য জীবজন্তু উদ্ভিঙ্গের কথা পড়িয়া যেমন হতবুদ্ধি হইয়া পড়িতে হয়, এইখানকার ব্যাপারসকল দর্শন করিয়া আমার কতকটা সেই রকম মনের ভাব । হইয়াছে। আমাদের স্বাভাবিক মনের গতি ও অভ্যাস যেন একে ক