পাতা:সাধনা (তৃতীয় বর্ষ, প্রথম ভাগ).djvu/২১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ઝ૦ - ... " ... " সাধনা। মোদিত আসন রচনা করিয়া, একটা প্রস্তরস্তুপের উপর উপবিষ্ট হইয়া এক ব্যক্তি একদৃষ্টে স্বৰ্য্যের পানে চাহিয়া আছে—কত অদ্ভুত ভঙ্গী ও মুদ্রা করিতেছে, দেখিলে মনে হয় উন্মাদগ্ৰস্ত ; দুইজন স্ত্রীলোক এক হস্তে নাক টিপিয়া ধরিয়া আছে, অপর হস্তে বুক চাপূড়াইতেছে ; একটি বৃদ্ধ একেবারে বক্রীভূত—সৰ্ব্বাঙ্গ কম্পমান—তাহার গাত্রলগ্ন সিক্ত সাড়া হইতে তাহার শীর্ণতার রেখা বেশ স্পষ্ট উপলব্ধি হইতেছে—বলীরেখাঙ্কিত হস্ত যোড় করিয়া সে ছয়বার পাক্ দিয়া ঘুরিতেছে। আর সকলে, ওষ্ঠাধরের দ্রুত স্পন্দন সহকারে, মধ্যে মধ্যে করপুটে জল উঠাইয়া সম্মুখে নিক্ষেপ করিতেছে। - শিবের নিকট, গণেশের নিকট, স্তুৰ্য্যের নিকট, অসংখ্য স্তুতি বন্দন উত্থিত হইতেছে। একমুহূর্তের জন্ত এক একবার সেই গুরুভারাক্রান্ত অভিভূতভাব হৃদয়ে উপলব্ধি করা যায়, যে ভাব পুরুষানুক্রমে ক্রমাগত বৰ্দ্ধিত হইয়া আৰ্য্য মস্তিষ্কের গঠন পরিবর্তন করিয়া হিন্দুদর্শন ও হিন্দুকাব্যের আকারে পরিণত হইয়াছে। এই রূপ উপলব্ধি হয় যে, বিশেষ বিশেষ নশ্বর সত্তার পশ্চাতে একটা মহা শক্তি বিদ্যমান, যে শক্তি সৰ্ব্বপ্রকার পদার্থ ও সত্তা উৎপাদন করে, যাহা অবিনশ্বর, যাহা অনন্তকাল বর্তমান, সহস্র সহজ জন্মমৃত্যুর মধ্যে যাহার প্রকাশ এবং যাহার কদাচ ক্ষয় হয় না । এই শক্তিকেই হিন্দুরা পূজা করে—এই শক্তিপূজাই তাহাদের ধৰ্ম্মের ভিত্তিভূমি। এই কথাটা যদি একবার উপলব্ধি করা যায়, - তাহা হইলে সৰ্ব্বপ্রকার অসঙ্গতির ব্যাখ্যা আপন আপনি হইয়া যায়। হিন্দুধৰ্ম্মের মধ্যে অসভ্যজাতিস্থলভ পৌত্তলিকতা সহিত অতি স্বক্ষ তত্ত্বচিন্তার সম্মিলন হইয়াছে। এই হিন্দুরা তেত্রিশ ভারতবর্ষে । - 8レア > 。 কোটি দেবতা মানে, তা ছাড়া পঞ্চভূত, পশুপক্ষী বৃক্ষ তারকা প্রস্তর সকলকেই পূজা করে। জগদ্ধ ক্ষবাদ—একেশ্বরবাদ—বহুদেববাদ সমস্তই ইহার মধ্যে একাধারে বর্তমান। বিশ্বের সাৰ্ব্বভৌমিক সত্তাকে কিম্বা তাহার বাহ প্রকাশকে এক করিয়া দেখ কি বহু করিয়া দেখ, জড়ভাবে দেখ কি আত্মাভাবে দেখ– যে ভাবে দেখো তাহারই উপর এই বিশেষ বিশেষ মতবাদ নির্ভর করে। একবার ইহা বুঝিতে পারিলে তাহদের বাতুল কল্পনার অর্থ পাওয়া যায়, তাহাদের কাব্যগত অদ্ভুত স্বল্পকাহিনীর ব্যাখ্যা হয়। হিন্দুরা প্রকৃতির মধ্যে মগ্ন হইয়া গিয়া, হস্তী বানর ভল্লুক কীট পতঙ্গ উদ্ভিজ্জ সকলকেই আপনাদের সমকক্ষ সঙ্গী করিয়া লইয়াছে। অধিকন্তু, তাহার একটা মহাপ্রাণ উপলব্ধি করিয়াছে,যে প্রাণ তরল তরঙ্গময়, যাহা মরিতেছে, জন্মিতেছে, বৃদ্ধি পাইতেছে এবং যে প্রাণ বিচিত্র ও চিরপরিবর্তনশীল। কিন্তু যখন আমি এই লোকারণ্যের মধ্যে এই সকল মন্দিরের মধ্যে, মুসলমান মসজিদের দুইটি সমুন্নত সোধধবল মিনার সুনীল গগনপটে অঙ্কিত দেখিলাম তখন আমার একটা খুব তফাৎ মনে হইল। এই মিনার দুটি গগন ভেদ করিয়া কেমন সিধা উঠিয়াছে। প্রার্থনার ঐকান্তিক আগ্রহ—অন্তরের একটি আকুল ধ্বনি যেন মূৰ্ত্তিমান হইয়া অপ্রতিহতবেগে উৰ্দ্ধে ছুটিয়াছে। এই ৷ মিনারের গঠনে এমন একটি জাতির হস্ত দেখিতে পাওয়া যায়, যে জাতি অনাড়ম্বরপ্রিয়, ইচ্ছাশক্তিসম্পন্ন, একেশ্বরবাদী এবং যাহার হৃদয় প্রবল আবেগে পূর্ণ। -