পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/১১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৮
সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি

পড়ে শোনানোও ছিল এঁদেরই কাজ। সম্রাটের দেখাদেখি সম্ভ্রান্ত পরিবারের সর্বত্রই অন্তঃপুরে বিদ্যাচর্চা হ’ত, মধ্যবিত্ত ঘরেও শিক্ষয়িত্রীর কাজ করবার জন্য বহু নারী লেখাপড়া শিখতেন। আজকের তুলনায় তাঁদের শিক্ষার ক্ষেত্র অনেক সঙ্কীর্ণ ছিল সত্য কিন্তু তাঁদের শক্তি এবং জ্ঞান-পিপাসা কম তা’ ব’লে একটুও ছিল না। হাতে লেখা পুঁথির যুগে যে কঠিন পরিশ্রম ক’রে তাঁরা রাশি রাশি বই নিজেরা আগাগোড়া নকল করেছেন, আজকের দিনে তার তুলনা সত্যই দুর্লভ।

 রাজপ্রাসাদ এবং ধনী ও মধ্যবিত্ত-সমাজের বাইরেও এই যুগে সার্বজনীন শিক্ষার জন্য যে সুব্যবস্থা ছিল, তার কথা উল্লেখযোগ্য। মুসলমানের মসজিদ, হিন্দুর মন্দির এবং বৌদ্ধদের বিহারগুলিতে বিনা পয়সায় প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়া হত, ছেলেরা এবং মেয়েরা শৈশবে সেখানে সমভাবেই শিক্ষার সুযোগ পেত। বহু মসজিদের সামনে দিয়ে যেতে গেলে আজও অনেক সময়ে পাঠনিরত ছেলেমেয়েদের দেখতে পাওয়া যায়। উত্তর-ভারতে এবং মধ্যপ্রদেশে আজও বহু মন্দির-প্রাঙ্গণে এবং বাংলা দেশের হরিসভায় বা কালীবাড়ীতে ছেলেমেয়েদের পাঠশালা বসে। ব্রহ্মদেশের ফুঙ্গিদের কৃপায় সেখানে নিরক্ষরতা ইংরাজরাজত্বের পূর্বে খুবই কম ছিল। ভারতবর্ষের গ্রামে গ্রামে রাজ-সাহায্যপ্রাপ্ত চতুষ্পাঠী, দেবোত্তর ব্রহ্মোত্তরভোগী অধ্যাপক ছাড়া প্রাথমিক শিক্ষার জন্য ‘ধান দিয়ে লেখাপড়া শিখবার’ পাঠশালা ছিল, যেখানে বালক-বালিকারা নিয়মিত প্রাথমিক শিক্ষা লাভ ক’রত। এই সব স্থাবর শিক্ষায়তন ছাড়া যাত্রা, কীর্তন, কথকতা প্রভৃতি সচল শিক্ষায়তন গ্রামে গ্রামে বর্তমান