পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সাহিত্যে নারী : স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি

বিভিন্ন দেবতার স্তবগান করেছেন, পুরুষেরই মতো অকুণ্ঠ ভাষায় আপনাদের অন্তরের কামনা ব্যক্ত করেছেন। কেউ চেয়েছেন রোগমুক্তি, কেউ চেয়েছেন বলিষ্ঠ অনুরক্ত স্বামী, কেউ চেয়েছেন শত্রুদমনে সহায়তা। ভাষার মাধুর্যে এবং প্রকাশভঙ্গীর প্রসাদগুণে এই সব অত্যন্ত ঘরোয়া কথাই চিরদিনের রসসাহিত্যে স্থানলাভ করেছে, বহু সহস্রাব্দীর ওপার থেকে সেদিনের সুখদুঃখ হাসিকান্নায় আজও আমাদের মর্ম স্পর্শ করছে। হিন্দু বিবাহমন্ত্রে সূর্যার লেখা কয়েকটি অতি অপূর্ব শ্লোক ঋগ্বেদের যুগ থেকে আজ পর্যন্ত চ’লে আসছে,— কোটি কোটি হিন্দুনারীকে জীবনের যাত্রাপথে আলো দেখিয়ে। ঋগ্বেদের দেবীসূক্তের রচয়িত্রী অম্ভৃণঋষিকন্যা বাক্ নিজেকে ব্রহ্মের সঙ্গে একাত্মবোধে স্বর্গমর্ত্যের অধিষ্ঠাত্রী বলে যে অপূর্ব ওজস্বিনী ভাষায় ঘোষণা করেছেন তা পড়লে শ্রদ্ধায় এবং বিস্ময়ে স্তব্ধ হয়ে থাকতে হয়। ইনিই যদি পরবর্তী যুগের বাগ্দেবী না হন, তবে সকল-কলাধিষ্ঠাত্রী বীণাপুস্তকধারিণী শ্বেতাম্বরা শুভ্রোজ্জ্বলকান্তি দেবী সরস্বতীর রূপমূর্তি এইযুগে ঋষির মানসচক্ষে কোন্ পটভূমিকায় প্রথম প্রতিভাত হয়েছিল তা’ আজ জানবার উপায় নেই। আমরা শুধু জানি সেদিনের তপোবনে তপোবনে সর্বশুক্লা বা কনকগৌরী বিদুষী ঋষিপত্নী এবং ঋষিকন্যার অভাব ছিল না। ‘সা বিদ্যা যা বিমুক্তয়ে' একথা সেদিন ভারতবর্ষ মা’নত, তাই মুক্তিকামীকে বিদ্যাশিক্ষা দিতে সেদিন ঋষিরা স্ত্রীপুরুষের মধ্যে পার্থক্যবুদ্ধি রাখতেন না। দম্পতি কি ক'রে পণ্ডিতা দুহিতা লাভ ক'রতে পারে তার শাস্ত্রোক্ত বিধান বৃহদারণ্যক উপনিষদে পাওয়া যায়। বৈদিক