পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/২৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৫০
সাহিত্যে নারী : স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি

প্রভৃতি গ্রীকপুরাণের সাধারণ ঘটনা। মৃগয়া দেবী আর্তিমিসের যেমন কোনো প্রণয়ঘটিত দুর্বলতা ছিল না, তেমনি কোনো দয়ামায়াও ছিল না। এক হতভাগ্য শিকারী অসতর্ক অবস্থায় তাকে দেখে ফেলার অপরাধে হরিণে রূপান্তরিত হ'য়ে নিজের পোষা কুকুরদের মুখে খণ্ড বিখণ্ড হ'য়ে প্রাণ হারিয়েছিল। সেদিনের গ্রীসের সমাজ যেভাবে গঠিত ছিল, তার দেব-দেবীদের মধ্যে তার জীবন্ত প্রতিমূর্তি আমরা সুস্পষ্ট দেখতে পাই। শৈশবে পরিত্যক্ত পিতৃঘাতী ইডিপাস্ তাঁর গর্ভধারিণী মা জেকোষ্টাকে না জেনে বিয়ে করেছিলেন, পরে সমস্ত জানতে পেরে জেকোষ্টা আত্মহত্যা করলেন। ব্যাকাস্ দেবতার পুরোহিত ‘কোরিসুস্’ সুন্দরী ‘ক্যালিবোয়ে’কে প্রণয় নিবেদন ক'রে প্রত্যাখ্যাত হ'লেন। ক্রুদ্ধদেবতার অভিশাপে মহামারী এল, ভবিষ্যদ্বাণী হ’ল, ‘ক্যালিরোয়েকে’ বলি না দিলে দেবরোষ শান্ত হবে না। হতভাগিনীকে দেশের লোক ধরে নিয়ে এল, বলিদানের ভার পড়ল ‘কোরিসুসে'র ওপর। কোরিসুস প্রেম-পাত্রীর রক্তপাত না করে বেদীর সামনে নিজেই আত্মহত্যা করলেন, ক্যালিরোয়ে অ্যাটিকায় পালিয়ে গেলেন, শেষে অনুশোচনায় নিজেও আত্মঘাতী হলেন। একদিকে দুর্নীতির বন্যা, আর একদিকে গভীর প্রেমের এবং ত্যাগের পুণ্যধারা ভারতীয় পুরাণের মতো গ্রীকপুরাণেও ওতপ্রোতভাবে প্রবহমান। অর্ফিউসের বীণার তানে চরাচর মোহিত হ'ত, তাঁর পত্নী ইউরিডিস্ সর্পদংশনে নিহত হলে শোকোন্মত্ত অর্ফিউস্ মৃত্যুপুরীতে গিয়ে প্রেতলোকপতি প্লুটোকে বীণাস্বরে মোহিত ক'রে পত্নীর জীবন ভিক্ষা পেলেন, শুধু শর্ত রইলো মৃত্যুপুরীর