পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/৩২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩০৪
সাহিত্যে নারী : স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি

 বৈষ্ণব সাহিত্যে দুইভাবের নারী-পরিচিতি আমরা লাভ করেছি,—প্রিয়া এবং মাতা। মা যশোদায় আমরা বিশ্বমাতার যে রূপ বিশ্বের ঘরে ঘরে প্রতিষ্ঠিতা তাঁকেই দর্শন করি। মাতৃচিত্তের অমূল্য বাৎসল্য রসকে যশোদার মধ্য দিয়ে ভাবপ্রবণ বৈষ্ণব কবিরা সাহিত্যের উচ্চাসনে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, সমগ্র মানব-জননীদের প্রতীকরপে। মা চিরদিন সন্তানকে কোল ছাড়া, চোখ-ছাড়া করতে শঙ্কিত হয়ে ওঠেন, পুত্র সঙ্গীদের সঙ্গে পথে বেরুচ্ছেন, এই গ্রামেরই প্রান্তসীমায়,—গোষ্ঠসীমায় হয়ত যাচ্ছেন, তাতেই ভয় ভাবনার অন্ত নেই। বড় শিংওয়ালা গরুর সামনে যেন না যান, রোদ না লাগান, ক্ষুধা পেলে কোঁচড়ে বাঁধা ক্ষীর ছানা যেন খান, এমন সাতশো কথা মাথার দিব্য দিয়ে বলছেন, ফিরতে একটু দেরী হলেই কেঁদে হাট বাঁধাচ্ছেন। প্রত্যুষ থেকে মায়ের আর কোন্ চিন্তা, কোন্ কাজ? গোবিন্দদাসের যশোদা সকাল বেলা ছেলেকে ভাকছেন;—

“আলস ত্যজি উঠহ যদু রায়,
আগত ভানু রজনী চলি যায়।”[১]

এমন সময়—

“অরুণ উদয় বেলা  সব শিশু হয়্যা মেলা
সভে গেল নন্দের দুয়ার।”

তখন—

“আনন্দিত নন্দরাণী  সাজাইল নীলমণি
নানা আভরণ পীতবাস।”


  1. “যদুরায়” শব্দটা তিনি নিশ্চয়ই ব্যবহার করেন নি।