পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/৩৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৬৪
সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি

তাঁকে আসক্ত জেনে আত্মসংযম হারিয়ে সেদিনের মত দিনের লোকলজ্জা পরিহার করে যে-দিকে দুচোখ যায় এমনই পূর্বাপর জ্ঞান পর্যন্ত হারিরে গৃহত্যাগ করলেন। কিন্তু শেষরক্ষা হ’ল। গভীর পতিপ্রেম তাঁর মনের দড়ি টেনে রইলো পুতুল নাচের পুতুলের মত। দূরে সরে যেতে না দিয়ে ফের ফিরিয়ে অনলে।

 কুন্দনন্দিনী আজন্মদুঃখিনী, অদৃষ্টের হস্তের তুচ্ছ ক্রীড়নক, তার মধ্যে ভালমন্দ এমন একটা কিছুই নেই দিয়ে সে উচ্ছঙ্খল চরিত্র তারাচরণকে বা শিক্ষিত নগেন্দ্রকে আকৃষ্ট করতে বা তাকে চিরদিন রক্ষা করতে পারে। শুধু হীরার প্রতিহিংসাপ্রদত্ত বিষের কল্যাণে মরে গিয়ে সে সাহিত্যজগতে বেঁচে রইলো।

 “আনন্দমঠ' গদ্যে লেখা একখানি মহাকাব্য। বঙ্কিমচন্দ্র নূতন গদ্যছন্দের প্রবর্তক না হলে পদ্যেই এ-পুস্তক বিরচিত হ'ত। জাতীয় জাগরণের মহাসন্ধিক্ষণে এর মূলমন্ত্রটি তিনি তাঁর পরম শ্রদ্ধেয় ভূদেবের কাছেই গ্রহণ করেছিলেন, তার প্রমাণ ভূদেবের ‘পুষ্পাঞ্জলি”। কিন্তু বঙ্কিমের ভাষালালিত্যে ও শক্তিময়ী শান্তি ও কল্যাণময়ী কল্যাণীর সুকল্যাণ স্পর্শে আনন্দমঠ” সহজতর ও সুন্দরতর হয়ে উঠেছে; ভগ্নপ্রাণ বাঙ্গালীকে আশার বাণী শুনিয়েছে, তার প্রাণে আনন্দ দিয়েছে, মাতৃমঠ প্রতিষ্ঠাব্রতে ব্রতী করেছে, অশোকমন্ত্র অমোঘমন্ত্র প্রচার করেছে;— সে-মন্ত্র “বন্দে মাতরম্।”

 “আনন্দমঠ” আরও একটী নিগুঢ় তত্ত্ব আমাদের নিলুপ্ত মনোবৃত্তিকে জাগিয়ে তোলবার জন্য প্রয়োগ করেছে, তা মাতৃপূজার মন্ত্রজাগরণে নারীর স্থাননির্দেশ করে। শুচিস্মিতা