পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/৩৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী
৩৭৭

নিঃসন্দেহ দৃঢ়তার সঙ্গে তার প্রমাণ সেই প্রজাদেরই অগ্নিকষা, দিয়ে দিয়েছেন, রাজা হিসাবে তিনি যাদের কথায় পত্নীকে বাধ্য হয়েই ত্যাগ করেছিলেন,—এ-দিক দিয়ে নাট্যকার আদৌ ভেবে দেখেন নি। ফলে শ্রীরামচন্দ্রের সঙ্গেই তাঁর আঁকা ‘সীতা’ চরিত্রও ক্ষুন্ন হয়েছে।

 সরলা দেবীচৌধুরাণীর দান নারীচরিত্র সৃষ্টিতে নয়, মাতৃপূজায়। “অতীত গৌরববাহিনী মম বাণী গাহ আজি হিন্দুস্থান” জাতীয় মহাসম্মিলনক্ষেত্রে বিশাল জনসমাজে একদা এই শক্তিময়ী মহিলার লিখিত এবং সংগীত এই গৌরব-সংবাহিনী বাণী মূর্ত হয়ে উঠেছিল। সাক্ষাৎ চারুণীদেবীর মতই তাঁর কণ্ঠনিঃসৃত সেই প্রাণোন্মাদিনী বাণীর সম্মোহনশক্তি সে-দিনকার সেই নিরস্ত্রযুদ্ধের যোদ্ধৃবর্গ অনুভব না করে পারেন নি। যখন তিনি বীরাষ্টমী ব্রতধারিণীও যুবজাগরণের পথপ্রদর্শিকা হয়েছিলেন তখন পুরুষের মধ্যেই বা কয়জন দেশের কথা ভাবতে শিখেছিলেন? অথচ দেখা যাচ্ছে দেশ এর মধ্যে সে-কথা ভুলে যেতেই বসেছে! কিন্তু তাঁর মর্মবাণী গোদিত হয়ে রৈল ঐ গানের ভাষায় এবং “আহিতাগ্নিকায়”। “আগুনের পরশমণি”, যাকে প্রাণে ছোঁয়াতে পারলে “জীবন ধন্য ও পুণ্য’’ হতে পারে, তারই একটু ক্ষুদ্র স্ফুলিঙ্গমাত্র হলেও সে আগুনই, তার দাম আলেয়ার চেয়ে অনেক বেশী।

 মাতৃপূজায় প্রমথনাথ রায়চৌধুরীর দানও নিতান্ত সামান্য নয়।

‘‘তুই মা মোদের জগৎ আলো
সুখে দুঃখে হাসি মুখে,
আঁধারে দীপ তুমিই জ্বালো”