পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/৪০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৮২
সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী

“আমার উমা এলো, হায় গিরিরাজ। কই এলো মৈনাক?
কই এলো বীর পুত্র আমার, কই সে অভয়ব্রতী?
অত্যাচারের মিথ্যাচারের শত্রু উদারমতি।”

প্রবাসিনী কন্যাকে বুকে পেয়েও যে তাঁর বুকের আধখানা ভরতে পারলো না, পারা সম্ভবপর নয়; মায়ের প্রাণের এই নিগূঢ় তথ্য কতখানি সহানুভূতি প্রাণে থাকলে তবেই পুরুষ লেখক তাকে এমন নিখুঁত চিত্রে অঙ্কিত করতে পারে। সেইজন্যই কবিকে ঋষি বলা হয়। দিব্যদৃষ্টি না থাকলে মানুষের গুহানিহিত অন্তরে প্রবিষ্ট হওয়া যায় না। মাতৃচিত্তের অন্তর্ব্যথা যে অবরুদ্ধ রোষের আকারে সহসা বিলাপ-মর্মর হ’তে আকারপ্রাপ্ত হয়ে আহতা সিংহীর মত গর্জে উঠতে পারে তা-ও তিনি দেখাতে ভোলেন নি;—

“মায়ের প্রাণের এ অভিশাপ ফলতে হবে ফলতে হবে,
ত্রিভুবনের রাজা হলেও আসন তাহার টলতে হবে।
অভিশাপের ভস্ম-পুতুল বিরাজ কর সিংহাসনে,
নিশ্বাসেরও সইবে না ভর, মিলবে হঠাৎ স্বপ্ন মনে।”

মায়ের প্রাণের এ হাহাকার আমরা আজ প্রাণে প্রাণে অনুভব করছি; অন্তরের অন্তঃস্থলে কেবলই বেজে বেজে উঠছে;—

“লুকিয়ে বেড়ায় চোরের মতন বড় চোরের ভয়ে,
কেমন আছে? আছে কি না কেই বা দেবে কয়ে।”

 ‘কয়াধূ” কবিতায় আবার আমরা সেই আর্তা-জননীরই অবরুদ্ধ কণ্ঠস্বর শুনতে পেয়ে বাষ্পপূর্ণ নেত্র বারম্বার মার্জনা করেও শুষ্ক রাখতে পারি না। সুপ্রসিদ্ধ দেশনেতাদের কারাবরণের প্রথম যুগে (এখন এ জিনিস বেশ গা-সওয়া হয়েছে) প্রাচীন রাজপুত