পাতা:সাহিত্য-মীমাংসা - বিষ্ণুপদ ভট্টাচার্য্য.pdf/১০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্য ও রসতত্ত্ব ఫె\లి দেয়। বাহাবস্তুর সহিত বিজ্ঞানাংশের সম্পর্ক তখন খণ্ডিত হইয়া যায়। তখন আমরা বলি, “আমি ঘট জানি না,’ ‘আমি পট জানি না,’ ‘আমি ইহা জানি না’, ‘আমি উহা জানি না । তৃতীয়, আনন্দাংশের আবরক যে অজ্ঞান, উহ। ‘অমানন্দাপাদক অজ্ঞানরূপে পরিচিত। উহার কার্য আত্মার নির্মল আনন্দরূপকে ঢাকিয়া দেওয়া । এই আনন্দরূপের সহিত বাহ বিষয়ের সম্বন্ধ বশতই আমরা সেই সেই বিষয় উপভোগের মধ্যে সুখের সন্ধান পাই । বস্তুত বাহ বিষয়ের কোনও স্বকীয় আনন্দরূপ নাই, আনন্দ কেবল আত্মচৈতন্যেরই অসাধারণ ধর্ম । পুত্র, কলত্র প্রভৃতি যে আমাদের প্রিয়, সে কেবল আমার আত্ম প্রিয় বলিয়। চন্দনামুলেপন যে আমাদের মুখহেতু, সে শুধু আমার আত্মা সুখস্বভাব বলিয়। যখন এই আনন্দাংশ অজ্ঞানের আবরণে অপ্রকাশিত থাকে, তখন আত্মার আনন্দরূপ ফুরিত হয় না। তখন সকলই দুঃখ, সকলই নিরানন্দ, সকলই অপ্রিয় তখন “আমি মুখী এইরূপ প্রতীতি হয় না, ‘আমি দুঃখী" এইরূপ প্রতীতি হইয় থাকে। কিন্তু মুখস্বভাব, আনন্দস্বভাব আত্মচৈতন্তে দুঃখ ও নিরানন্দের আরোপ কখনই বাস্তব হইতে পারে না, উহা ভ্রম মাত্র, এবং সেই ভ্রমের মূলে আছে অবিদ্যা—যাহা আনন্দাংশের স্বাভাবিক স্ফুরণকে ব্যাহত করিতেছে। এই আনন্দের আবরক অজ্ঞান যখন অপগত হয় তখন আত্মার প্রিয়ুরূপ আপন পরিপূর্ণ মহিমায় প্রকাশ পায়। কবিকর্মের—তাহা কাব্যই হউক, নাট্যই হউক, চিত্রই হউক, অথবা ভাস্কৰ্যই হইক (আমরা এখানে 'কবি' শব্দের ব্যাপক অর্থ ধরিতেছি, ইংরেজীতে ষাহাকে creative artist বলা হইয় থাকে ), তাহার মুখ্য উদ্দেশু সহৃদয়ের আত্মচৈতন্যের এই আনন্দাবরক অজ্ঞানের অপসারণ, যাহাকে দার্শনিক পরিভাষায় বলিতে পারা যায় 'আবরণভঙ্গ’ । আনন্দস্বরূপ আত্মার অভিব্যক্তিসাধনই সাহিত্যের চরম লক্ষ্য, এবং যে ব্যাপারবশে আত্মার আনন্দাংশের এই আবরণভঙ্গ সম্ভবপর হয়, তাহাকে ধ্বনিবাদিগণ ব্যঞ্জনাব্যাপার’ (function